ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকার

বর্তমানে নিঃসন্দেহে এলপিজিই সাশ্রয়ী

বর্তমানে নিঃসন্দেহে এলপিজিই সাশ্রয়ী

-

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৩ | ০১:৩৯ | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩ | ০৬:৩৯

সমকাল : এলপিজির বাজারমূল্য বর্তমান মাসে সর্বনিম্ন। অন্যান্য জ্বালানির সাপেক্ষে বর্তমান বাজার প্রেক্ষাপটে আপনার মন্তব্য কী?

অনুপ কুমার সেন : এলপিজি বলতে গেলে আমাদের দেশে খুব স্বল্প পরিমাণে উৎপাদন হয় এবং প্রায় ৯৮ শতাংশ এলপিজি আমদানি করতে হয়। এটি হচ্ছে সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর জ্বালানি এবং এর দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বিশ্বের বিভিন্ন পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। বর্তমান মাসে আন্তর্জাতিকভাবে দাম কমায় দেশেও এলপিজির খুচরা মূল্য সর্বোচ্চ সহনীয় পর্যায়ে আছে। গত ছয় মাসের এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ঘোষিত খুচরা মূল্যের বাজারচিত্র দেখলেই এটা বোঝা যাবে। গত ফেব্রুয়ারিতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাসের খুচরা মূল্য ১ হাজার ৪৯৮ টাকার ওপরে ওঠে। ফলে তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিল। বর্তমান মাসে অন্যান্য জ্বালানির তুলনা করলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, এলপিজিই সাশ্রয়ী।

সমকাল : বিইআরসি নির্ধারিত রেট এবং খুচরা পর্যায়ে বাজারমূল্যের বৈসাদৃশ্য সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?

অনুপ কুমার সেন :  বিইআরসি প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে খুচরা পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণ করে। এ নিয়মের মধ্যে কিছু অসংগতির কারণে বিইআরসির মূল্যে তালিকা খুচরা পর্যায়ে এখনও ঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না। কারণ, বিইআরসি ডিস্ট্রিবিউটর পর্যায়ে ৩৭ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ৩৮ টাকা খরচ ধরে। কিন্তু পরিবেশক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ঘর ভাড়া, গাড়ি ভাড়া, ম্যানেজারের বেতন, শ্রমিকের বেতন, মালিকের নিজস্ব তহবিলের মুনাফা ইত্যাদি দিয়ে তিনি কোনোভাবেই তাঁর খরচ তুলতে পারেন না। তাই তারা বিইআরসি নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতে পারেন না। এখানে বিইআরসি কর্তৃক প্রতিটি গ্যাসভর্তি সিলিন্ডারের জন্য পরিবেশক ও খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য যে খরচ দেখানো হয়েছে, প্রকৃত বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। এ জন্য তারা কিছুটা বেশি দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হন। এ পর্যন্ত প্রতিবারই দাম ঘোষণার আগে ও পরে বিইআরসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে অপারেটর ও পরিবেশকদের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি জানানো হয়েছে। বিইআরসি কর্তৃপক্ষ পরিবেশক ও খুচরা ব্যবসায়ীদের বাস্তব খরচ পর্যালোচনা করে একটি সমাধান দিতে পারেন।

সমকাল : বিইআরসি ঘোষিত মূল্যের বৈসাদৃশ্য কী?

অনুপ কুমার সেন : সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো পণ্যের মূল্য কিছু ফিক্সড খরচ ও ভ্যারিয়েবল খরচ হিসাব করে নির্ধারণ করা হয়। বিইআরসির বৰ্তমান প্রাইস ফর্মুলা ২০২১ সালের এপ্রিল  মাসে করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি, ব্যাংকের এলসি কমিশন, এলসি সেটেলমেন্টের অতিরিক্ত খরচ মানে ব্যাংকের ডলার সংকটের কারণে অতিরিক্ত টাকায় ডলার কিনে ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করা, বার্ষিক সুদের হার, সামগ্রিকভাবে যেসব আর্থিক খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে তার কোনোটাই বিইআরসির মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় আনা হচ্ছে না। এসব বিষয় আমরা প্রথম থেকেই বিইআরসি কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করেছি। কর্তৃপক্ষের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি, প্রতিটি এলপিজি অপারেটর বিইআরসি ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী এলপিজি সরবরাহ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং এটা মানতে গিয়ে অনেক কোম্পানি এরই মধ্যে মূলধন হারিয়ে বন্ধের সম্মুখীন হচ্ছে।

সমকাল : বর্তমান বাজারে অপারেটরদের সক্ষমতা এবং বাজারে এলপিজির চাহিদার মধ্যে ব্যাপক বৈসাদৃশ্য রয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?

অনুপ কুমার সেন : বর্তমানে এলপিজির বাজার চাহিদা প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টন, যা ২৮টি কোম্পানির মাধ্যমে বাজারজাতকরণ হচ্ছে। এলপি গ্যাস বর্তমানে সারাদেশের আনাচে-কানাচে প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। বর্তমানে বাজারে যেসব কোম্পানি বাজারজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের বর্তমান এলপিজি স্টোরেজের যে সক্ষমতা আছে, তাতে বাজারের চাহিদা বর্তমানের দ্বিগুণ বা তার বেশি হলে তাও সরবরাহ করতে সক্ষম। সব অপারেটর বাজারজাতকরণ সক্ষমতা বাড়াতে চায় এবং তারা তাদের এলপি গ্যাস ধারণক্ষমতার সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে না পারলে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় জোগান দেওয়ার সক্ষমতা বেশি। তাই সরকার নিয়ন্ত্রিত গ্যাস কোম্পানিগুলো অবৈধ সংযোগ বন্ধ করে দিলে গ্যাসের অপচয় রোধ করা যাবে এবং বাজারে এলপিজির চাহিদা ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।

সমকাল : ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই?

অনুপ কুমার সেন : কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহারের বিকল্প নেই। আমাদের দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত অফুরানও নয়। তাই এলপি গ্যাসকে সাশ্রয়ী, সুলভ ও নিরাপদ করতে হবে। বিইআরসিকে তার প্রাইস ফর্মুলা বর্তমান বাজার অবস্থা এবং বাস্তবতার নিরিখে নির্ধারণ করতে হবে। গণমানুষের প্রয়োজনে সরকারকে এই খাত থেকে ভ্যাটের পরিমাণ ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। আমরা আশা করছি, বিইআরসি এবং জ্বালানি স্বার্থসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে এলপিজি অপারেটর, ব্যাংক এবং সাধারণ জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করার প্রকৃত সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করবে। আমরা এলপিজিকে নিরাপদ ও সহজলভ্য জ্বালানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই। সর্বোপরি অবৈধ সংযোগ বন্ধ করে গ্যাসের নিরাপদ ব্যবহার এবং সহজলভ্য করার জন্য অপারেটর ও সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ উদ্যোগে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।

আরও পড়ুন

×