ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকারে আ স ম আবদুর রব

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নতুন বাস্তবতা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নতুন বাস্তবতা

আ স ম আবদুর রব

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হকিকত জাহান হকি

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:৪৮ | আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৫:১৭

ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত গণবিস্ফোরণ ও গণবিদ্রোহ বাংলাদেশকে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারভিত্তিক রাষ্ট্র পুনর্নির্মাণ ও পুনর্গঠনের অধিকতর সুযোগ এনে দিয়েছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে রাষ্ট্র রূপান্তরের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যারা আত্মসাৎ করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই-ই এখন ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে’ রূপ লাভ করেছে বলে মনে করেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তাঁর মতে, এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে ৭১ ও ২৪-এর চেতনায় নির্মাণ করতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, রাজনীতির বাস্তবতা ইত্যাদি নিয়ে সমকালের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হকিকত জাহান হকি

সমকাল: ১৯৭১ সালের ২ মার্চ আপনারা স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। কেমন ছিল অগ্নিঝরা মার্চের সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট?

আ স ম রব: একাত্তরের ২ মার্চ বাঙালি জাতিরাষ্ট্র নির্মাণের চূড়ান্ত আকাঙ্ক্ষার রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে সিরাজুল আলম খানের পরিকল্পনায় এবং নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্তে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেছিলাম। দ্বিজাতি তত্ত্বকে ছুড়ে ফেলে বাঙালির রাষ্ট্র নির্মাণের প্রয়োজনে পতাকা উত্তোলন ছিল অনিবার্য এবং অপরিহার্য। ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো/ বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা/ পদ্মা মেঘনা যমুনা’– এসব স্লোগান উৎসারিত হয়েছে স্বাধীনতার লক্ষ্য সামনে রেখে। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যুবসমাজের মাঝে সশস্ত্র সংগ্রামের মনন গড়ে ওঠে। 

নিউক্লিয়াসের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও যথাযথ প্রস্তুতির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি সেনাশাসকদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে স্বাধীনতার ‘পতাকা উত্তোলন’ ও ‘ইশতেহার পাঠ’ করা সম্ভব হয়। ২ মার্চ ঐতিহাসিক ‘পতাকা উত্তোলনের’ পর ৩ মার্চ ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ পাঠ করা হয়। ইশতেহারে স্বাধীন দেশের নামকরণ ও জাতীয় সংগীত নির্ধারণসহ স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ঘোষণা করা হয়। ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সংগ্রামী নেতা শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। পতাকা উত্তোলন ও স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণার পর ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণা অনিবার্য হয়ে পড়ে। তাঁর সেই ভাষণ হাজার বছরের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে সব বিরোধ ছাপিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।

বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে মওলানা ভাসানীর ‘আসসালামু আলাইকুম’ এবং ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ ঘোষণার প্রকম্পিত বক্তব্যও স্বাধীনতার প্রশ্নে অপরিসীম ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের ঐতিহাসিক ভূমিকা সম্পৃক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নৈর্ব্যক্তিকভাবে এখনও সংকলিত হয়নি, যা দুর্ভাগ্যজনক।

স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সবার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি না দিলে বঙ্গবন্ধুর মর্যাদাকে যে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়, তা আওয়ামী লীগ বুঝতে অপারগ। সত্যকে অস্বীকার করে বিবেক বন্ধক রাখা কোনো কৃতিত্বের বিষয় নয়।

একাত্তরের ২৬ মার্চের সূচনায় জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে অতুলনীয় সাহসিকতার পরিচয় দেন। ফলে বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র বাহিনীর অভাবনীয় বিদ্রোহ দ্রুত সংহত হতে শুরু করে। এর পর কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পর পর দু’দিন প্রচারিত জিয়াউর রহমানের ভাষণ বিদ্যুতের মতো ছড়িয়ে পড়ায় সামরিক বাহিনীসহ সাধারণ মানুষের মনে অনুপ্রেরণার সৃষ্টি হয়, যা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সমকাল: নতুন জাতিরাষ্ট্র নির্মাণে সিরাজুল আলম খানকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

আ স ম রব: প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কর্মকাণ্ডের সম্মিলিত ফসল হচ্ছে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ। অপ্রকাশ্য কর্মকাণ্ডের নায়ক হচ্ছেন সিরাজুল আলম খান। তিনি ছিলেন স্বাধীনতার লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনার পরিকল্পনাকারী। বঙ্গবন্ধু উপাধির পরিকল্পনা, স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন, ইশতেহার পাঠ, জয় বাংলা বাহিনী এবং বিএলএফ গঠনসহ ছাত্র-যুবসমাজের মননে স্বাধীনতার স্বপ্ন বপন করার অসাধ্য কর্মকাণ্ডের নায়ক হচ্ছেন সিরাজুল আলম খান।

সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র নির্মাণের রূপকার ও প্রধান কারিগর এবং জাতীয়তাবাদের বিকাশে পথপ্রদর্শক হিসেবে ইতিহাসে স্মরণীয়। তিনি দেশের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ নির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। সেই প্রখ্যাত দার্শনিক ও চিন্তাবিদ সিরাজুল আলম খানের অংশীদারিত্ব গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সমকাল: ‘জয় বাংলা’ স্লোগান কীভাবে এসেছিল?

আ স ম রব: সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বাধীন নিউক্লিয়াসের অন্যতম দুই সদস্য ও ছাত্রলীগ নেতা আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও চিশতী শাহ হেলালুর রহমান ১৯৬৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বাংলার মাটিতে সর্বপ্রথম জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করেন। ‘তোমার আমার ঠিকানা/ পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো/ বাংলাদেশ স্বাধীন করো,’ ‘স্বাধীন করো স্বাধীন করো/ বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তুমি কে? আমি কে? বাঙালি, বাঙালি,’ ‘পিন্ডি না ঢাকা? ঢাকা, ঢাকা।’ এসব স্লোগানও নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। এসব স্লোগান ছিল স্বাধীনতাকামী বাঙালির প্রাণের স্পন্দন, স্বাধীনতার বীজমন্ত্র।

স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ একটি পত্রিকা প্রকাশ করে ‘জয় বাংলা’ নামে এবং ছাত্রদের নিয়ে ‘জয় বাংলা বাহিনী’ও গঠন করা হয়। আমি ছিলাম জয় বাংলা বাহিনীর অধিনায়ক এবং কামরুল আলম খান খসরু ছিলেন উপঅধিনায়ক।

সমকাল: আওয়ামী লীগ সরকার আদালতের আদেশে এই স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান করেছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে উচ্চ আদালত এই স্লোগানের আদেশ স্থগিত করেছেন। এটাকে কীভাবে দেখেন? 

আ স ম রব: ঐতিহাসিক ঘটনাবলির গুরুত্ব বা তাৎপর্য সংকীর্ণ দলীয় দৃষ্টিতে আবদ্ধ করা যায় না। স্বাধীনতা সংগ্রামের অনন্য ঘটনা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের পরিণতি ইতিহাসই নির্ধারণ করবে। ইতিহাস বিকৃত করা বা অস্বীকার করা কোনোটাকেই ইতিহাস ক্ষমা করবে না। 

সমকাল: যখন একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার নতুন এক বিজয় এসেছে। এই সময়ে মুক্তিযদ্ধের মহান বিজয় দিবসকে কীভাবে দেখছেন?

আ স ম রব: রক্তাক্ত জুলাই হত্যাকাণ্ড এবং পরাক্রমশালী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের সশস্ত্র শক্তির বিরুদ্ধে, নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান– বিশ্ব রাজনীতিতে এক অনন্য ঘটনা। এটা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, অবিস্মরণীয় ও যুগান্তকারী ঘটনা। স্বৈরাচারী, ঘৃণ্য, নিকৃষ্ট ও মধ্যযুগীয় বর্বর রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের দাবিতে রাজপথ দখল করে। আমাদের ছাত্রসমাজ অধিকারের দাবিতে মৃত্যুকে জয় করে মুক্তি ছিনিয়ে আনার যে মশাল প্রজ্বলিত করে দিয়েছে, তা বিশ্বব্যাপী গণমানুষের মুক্তির আন্দোলনকে প্রেরণা জোগাবে।

ফ্যাসিবাদের ভয়াবহ নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে যখন রাজনৈতিক-সামাজিক দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়েছিল, অন্যায়-অবিচার ও বর্বর ব্যবস্থার কালো ফণার ছুবলে রাষ্ট্র এবং সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল, তখন তার থেকে একমাত্র মুক্তির পথ– গণঅভ্যুত্থান, গণবিস্ফোরণ ও গণবিদ্রোহ অনিবার্য হয়ে পড়েছিল; যা ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থান বা এই মহাজাগরণ শিখিয়েছে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হয়, কীভাবে ছাত্র-জনতা বিপ্লবের পথপ্রদর্শক হয়, কীভাবে রাষ্ট্রের প্রবল সশস্ত্র শক্তিকে নিরস্ত্র থেকেও রুখে দিতে হয়। এই গণজাগরণে শত শত ছাত্র-জনতা খুন হয়েছে, হাজার-হাজার মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছে। এমনকি ঘরের ভেতরেও গুলিতে নিহত হয়েছে শিশু-কিশোর। আন্দোলন-লড়াইয়ে যারা প্রাণ বলিদান করছে এবং বুলেটের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সাহসিকতার সঙ্গে সংগ্রাম এগিয়ে নিয়েছে– তারা এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা।

ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত গণবিস্ফোরণ ও গণবিদ্রোহ বাংলাদেশকে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারভিত্তিক রাষ্ট্র পুনর্নির্মাণ ও পুনর্গঠনের অধিকতর সুযোগ এনে দিয়েছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে রাষ্ট্র রূপান্তরের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

এই গণঅভ্যুত্থান নিপীড়নমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে জাতীয় মুক্তির সূচনা করেছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারের প্রশ্নটি সমগ্র বাংলাদেশে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভিপ্রায় অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ায় অভ্যুত্থানের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। অবিচার, বৈষম্য ও অপশাসনের বিরুদ্ধে এক নতুন বাংলাদেশের উত্থান ঘটেছে, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে এক নতুন জাগরণ ঘটেছে। ন্যায্যতার শাশ্বত বিধান লঙ্ঘন এবং সাংবিধানিক অধিকার তথা গণতন্ত্র থেকে জনগণকে বঞ্চিত করায় সমগ্র দেশে মুক্তিকামী মানুষের ‘গণজাগরণ’ সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রদের সংগ্রামের সঙ্গে শিক্ষক, জনতা, শ্রমিক, আইনজীবী, ডাক্তার, প্রকৌশলীসহ সর্বস্তরের জনগণ সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যারা আত্মসাৎ করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই আজ ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে’ রূপ লাভ করেছে। এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে ৭১ ও ২৪-এর চেতনায় নির্মাণ করতে হবে। দেশে নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, নীতি-নৈতিকতা, দেশের সম্পদ সুরক্ষাসহ সবকিছুকে ঢেলে সাজানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকারের অপসারণের মাধ্যমে। 
ছাত্র গণঅভ্যুত্থান রাজনীতিতে নতুন বাস্তবতা হাজির করেছে। এটাকে বিবেচনা নিয়েই রাষ্ট্র ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের পদক্ষেপ নিতে হবে। 

সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আ স ম রব : আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন

×