ফুটবল থেকে মুছে গেল সাইফ স্পোর্টিং

সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের লেগো। ছবি: ফাইল
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২২ | ২২:০০
করপোরেট ফুটবলের প্রথাটা প্রথম চালু করেছিল তারা। সিনিয়রের সঙ্গে জুনিয়র দল গঠন করে দেশের ফুটবলে ভালোভাবেই নিজেদের যুক্ত করেছিল সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। ২০১৬ সালে ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায় আগমনের পর বড় সাফল্য না পেলেও নামিদামি প্লেয়ারের সঙ্গে তারকা কোচদেরও এনেছিল তারা।
তাদের কারণেই আবাহনী-মোহামেডানের পর কোনো দল সাপোর্টার্স ফোরাম গঠন করেছিল। সেই সাইফ স্পোর্টিংই কিনা সব ধরনের ফুটবল থেকে সরে গিয়েছে। বুধবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বরাবর চিঠিতে ফুটবলের সব কার্যক্রম থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ক্লাবটি। শুধু প্রিমিয়ার লিগেই নয়; সাইফের যে জুনিয়র দল আছে, তাদেরও আর ফুটবলে দেখা যাবে না। দেশের ফুটবলে কোনো ক্লাবের এভাবে সরে দাঁড়ানোর ঘটনাটি হয়তো প্রথমই।
সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে তৃতীয় হয়েছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব; যা লিগে তাদের সেরা সাফল্য। মঙ্গলবার শেষ হয়েছে প্রিমিয়ার লিগ। সেদিন রাতেই অবশ্য সরে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় ক্লাব ম্যানেজমেন্ট। ফুটবলে নাম লিখিয়ে বিনিয়োগ না পাওয়া ছাড়াও বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছে সাইফ স্পোর্টিং। বাফুফে বরাবর চিঠিতে যা লিখেছে, তার সারমর্ম বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে তুলে ধরেন দলটির কর্ণধার তরফদার মোহাম্মদ রুহুল আমিন, 'বিশ্বজুড়ে সবাই আর্থিকভাবে সমস্যায় রয়েছে। বোর্ড পরিচালকদের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ফুটবলে কিন্তু আমরা পুরোটা দিতে পারছি না।'
স্থায়ীভাবে নন, সাময়িকভাবে ফুটবল থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব চেয়ারম্যান, 'পরিস্থিতি ভালো হলে আমরা আবার ফিরে আসতে পারি ফুটবলে।'
যতই বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন রুহুল আমিন, অনেকেই অন্য কারণ দেখছেন। বাফুফের গত নির্বাচনে কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব নিজ থেকে সভাপতি পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েও স্বেচ্ছায় সরে যাওয়াসহ আরও বেশ কিছু কারণেই ফুটবল থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে মনে করছেন ফুটবল-সংশ্নিষ্টরা। চলতি মৌসুমে রেফারিং এবং আরও কিছু বিষয় নিয়ে বাফুফের সঙ্গে মতানৈক্য হয়েছে সাইফের।
পেশাদার লিগ কমিটির নানা সিদ্ধান্তেও নাখোশ তারা। ফুটবল থেকে সরে যাবে বলে কোচ আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানির সঙ্গেও চুক্তি নবায়ন করেনি তারা। আনুষ্ঠানিকভাবে দলবদল শুরুর আগেই অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াসহ প্রায় ১৫ ফুটবলার অন্য ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। মাঠ এবং মাঠের বাইরের নানা ইস্যুতে আলোচনায় থাকা সাইফের ফুটবল ছাড়ার খবরটি দেশের ফুটবলে 'বোমা' হয়ে এসেছে।
আগামী মৌসুমে ১২ দল নিয়ে হবে প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দুই সেরা ক্লাবের সঙ্গে খেলবে সদ্য সমাপ্ত মৌসুমের ১০টি দল। সেই দলের একটি সাইফ স্পোর্টিং। এখন তারা সরে দাঁড়ানোয় জটিলতায় পড়তে হচ্ছে পেশাদার লিগ কমিটিকে।
এর বিকল্প কী হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে বলে গতকাল জানান বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ, 'ফুটবল কর্মকাণ্ড থেকে সরে দাঁড়ানোর যে চিঠি সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব দিয়েছে, আমরা তা পেয়েছি। এটার কর্মপরিকল্পনা লিগ কমিটিই নির্ধারণ করবে। তবে আমি একটু বলতে পারি প্রতিটি মৌসুমেই কিন্তু দল গ্যারান্টেড না। ক্লাব লাইসেন্স এবং আনুষঙ্গিক বিষয় দেখার পরই আমরা দলগুলোকে খেলার অনুমতি দিই। তাই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যারা চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ হয়েছে, তারা যে আগামী মৌসুমে খেলবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখানে অনেক নিয়মকানুন ফলো করতে হয়।'