পথে পথে দক্ষিণী সিনেমার জীবন্ত চরিত্র

সেকান্দার আলী, চেন্নাই থেকে
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ | ০৫:৪৯ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ | ০৬:০৫
দেখে মনে হবে চারদিকে তামিল সিনেমার জীবন্ত দৃশ্য। লুঙ্গি পরে মোটরবাইক চালিয়ে ছুটে চলছেন বড় কোনো ব্যবসায়ী বা প্রভাবশালী নেতা, পোশাক দেখে যাদের চেনার উপায় নেই। তামিলনাড়ুর চেন্নাই শহরে ঢোকার পর থেকে কেমন সিনেমা সিনেমা মনে হচ্ছে। যদিও সিনেমার মতো ‘ভায়োলেন্স’ বা উগ্রতার লেশমাত্র নেই। মানুষগুলো খুবই আন্তরিক স্বভাবের। কিছু সিএনজি ও ট্যাক্সিচালক ছাড়া বিদেশিদের ঠকানোর প্রবণতা নেই বললে চলে।
বুধবার বিকেলে চেন্নাই পৌঁছানোর পর থেকে যেটুকু দেখার সুযোগ হয়েছে, তাতে করে ভালো লেগে গেছে এই শহর ও শহরের মানুষকে। তবে গরমটা একটু কম হলে ভালো হতো। বিষয়টি প্রাকৃতিক হওয়াতে কারও কিছু করার নেই। তেমন কিছু করার সুযোগ থাকলে সে ব্যবস্থাও হয়ে যেত।
বিশ্বকাপ কাভার করতে ভারতে এসেছি ৮ অক্টোবর। দিল্লি হয়ে ধর্মশালায় যেতে হয়েছে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে। হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের ম্যাচ কাভার করে চেন্নাইয়ে আসা। যদিও ধর্মশালা থেকে চেন্নাই পৌঁছাতে ২০ ঘণ্টারও বেশি ভ্রমণ করতে হয়েছে। ধর্মশালা থেকে বাস রিজার্ভ করে দিল্লিতে আসা ও দিল্লি থেকে তিন ঘণ্টার বিমান ভ্রমণ করে নতুন শহরে পৌঁছানো। রাত ১০টা থেকে সকাল ১০টা– পুরো ১২ ঘণ্টার বাস ভ্রমণ ছিল স্বস্তির চেয়ে ক্লান্তি ভরা।
টানা তিন দিন বিরতিহীন ছুটে চলার গল্প। ক্রিকেট বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা বেশির ভাগ সাংবাদিকের এভাবেই বিরামহীন ছুটে চলতে হয় এক শহর থেকে অন্য শহরে, এক ভেন্যু থেকে অন্য ভেন্যুতে। কখন রাত আসে, কখন দিন– সে হিসাব থাকে না। টিম হোটেলে যাওয়া, মাঠের অনুশীলনে উপস্থিত থাকা, রিপোর্টের খোঁজ করতে দিন পার। গতকাল সকালে গিয়েছিলাম বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের নিবাস আইটিসি গ্র্যান্ড চোলা হোটেলে।
নিরাপত্তাকর্মীদের বুঝিয়ে হোটেলের ভেতরে ঢুকতে পারা ছিল একটি অর্জন। ‘মেইন লবি’তে দেড় ঘণ্টা উপস্থিত থেকে ক্রিকেটারদের দেখতে পাওয়া ছিল ভালো অভিজ্ঞতা। বিসিবি কর্মকর্তা বা সাপোর্ট স্টাফদের কারও কারও সঙ্গে এক-আধটু কথাবার্তাও হয়েছে। তাদের বেশির ভাগকে দেখে মনে হয়েছে ভীত। ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম তো এক মিনিটের জন্য দাঁড়াতে চাইলেন না। সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে বিপদে পড়ার শঙ্কা ছিল তাঁর চোখেমুখে। টিম হোটেলের পরিবেশ এবং সাপোর্ট স্টাফদের দূরত্ব বজায় রাখতে দেখে মনে হচ্ছিল– অলিখিত একটা কারফিউ বলবত রয়েছে। খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ, কর্মকর্তা– সবাইকে সে নিয়ম মেনে চলতে হচ্ছে। কোনো এক শক্তিশালী মানুষ পেছন থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন সবাইকে।
টিম হোটেলের লবিতে দেখা ধারাভাষ্যকার আতহার আলীর সঙ্গে। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে তিনি জড়িয়ে ধরেন, কোলাকুলি করেন, ছবি তোলেন। চেন্নাইয়ে কোথায় উঠেছি, হোটেল কেমন, সকাল সকাল টিম হোটেলে কেন; আরও অনেক জিজ্ঞাসা জাতীয় দলের সাবেক এ ক্রিকেটারের। শেষে নিজেই বলেন, বুঝতে পেরেছি চুপি চুপি নিউজের খোঁজ করছ। খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা হয়েছে তো?
আতহার আলী রুমে ফিরে গেলে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর সঙ্গে দেখা লবিতে। বাংলাদেশ দলের রোমাঞ্চকর হোটেল অভিযান ওখানে শেষ। বেলা সাড়ে ১১টায় আবার চেন্নাইয়ের পথে নামা। টুকটুক করে শহর দেখা শেষ করে বঙ্গোপসাগরের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খুব আপন মনে হচ্ছিল সাগরকে। এ তো আমাদেরই সাগর– বঙ্গোপসাগর।
- বিষয় :
- চেন্নাই
- বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড
- ট্যুর ডায়েরি