ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

তাওহিদের ‘হৃদয় নিংড়ানো’ সেঞ্চুরির ম্যাচে হার

তাওহিদের ‘হৃদয় নিংড়ানো’ সেঞ্চুরির  ম্যাচে হার

ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির পর তাওহিদ হৃদয়ের উচ্ছ্বাস। বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে ১১৮ বলে ১০০ রান করেন তিনি- সংগৃহীত

নাজমুল হক নোবেল, দুবাই থেকে

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:১২ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০৭:০২

ছুটির দিন নয়, তার পরও অনেক প্রবাসী কাজের ফাঁকে এসেছিলেন মাঠে। পায়ের পেশিতে ব্যথার যন্ত্রণায় যখন তাওহিদ হৃদয় মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন, তখন সেই গ্যালারি থেকেই তাঁর জন্য প্রার্থনা উঠেছে, উঠে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছে। দর্শকদের সেই আকুলতা বোধ হয় ছুঁয়ে গিয়েছিল তাওহিদকে। তাই হৃদয় নিংড়ানো সেঞ্চুরিই তিনি উপহার দিয়েছেন দুবাইয়ের দর্শকদের। ৩৫ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে দল যখন মুমূর্ষু অবস্থায়, তখন তিনি আর জাকের আলী মিলে অক্সিজেন দিয়ে গেছেন জুটিতে ১৫৪ রেকর্ড রান তুলে। কিন্তু মরুতে ইনিংসের শুরুতে যে ‘বালুঝড়’ তুলেছিলেন ভারতীয় বোলাররা, দলের পাঁচ ব্যাটারের পাঁচ শূন্যের পর হৃদয়ের ১০০ রান দিয়েও সেই ক্ষতিপূরণ হয়নি। তাই সাকুল্যে ২২৮ রান পুঁজি করেও রোহিতদের কাছে ৬ উইকেটে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। শুভমান গিলের সেঞ্চুরিতে ভর করে ২১ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে ২৩১ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। ঢাকা থেকে শান্তর বলে আসা– ‘আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া’; এর মিশনে এই হার জোর ধাক্কা দিয়েছে।

এমনিতে অধিনায়ক নিজেই ম্যাচ খেলার ঘাটতি নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গিয়েছেন। বাংলাদেশ দলও বিপিএলের কারণে এই ফরম্যাটে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেনি। তার ওপর এদিন দুবাইয়ে নতুন পিচে খেলা হয়েছে। টস জিতে তাই শান্তর ব্যাটিং নেওয়াটা ঠিক ছিল কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিতভাবেই তাঁকে প্রশ্ন শুনতে হবে। এই কৌতূহলেরও উত্তর দিতে হবে– কেন এদিন দলের সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার নাহিদ রানাকে একাদশে রাখা হয়নি? প্রথম ওভারেই টানা চারটি ডট খেলার পর মোহাম্মদ শামিকে ড্রাইভ করতে গিয়ে শূন্য রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বসেন সৌম্য। অধিনায়ক এসে হার্সিত রানার অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল খেলতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ দিয়ে বসেন। ওপেনার তানজিদ জেঁকে বসা ভয় দূর করার জন্য কিছু বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন বটে। কিন্তু অক্ষর প্যাটেলের বল অফসাইডে খেলতে গিয়ে ২৫ রানের ইনিংসটির ইতি টানেন। মাঝে মেহেদী হাসান মিরাজও ফিরে যান ৫ রান করে। মুশফিক এসেও শূন্য রানে আউট হয়ে যান সেই অক্ষরের বলেই। রেকর্ড বলে তামিম ইকবালের সর্বাধিক ৩৬টি শূন্য ইনিংসের পর মুশফিকের এই ৩৩টি শূন্যর ইনিংস মাশরাফির সঙ্গে যৌথ্যভাবে তালিকার দ্বিতীয়তে রয়েছে। হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেছিলেন এ সময় অক্ষর প্যাটেল। নতুন ব্যাটার জাকের এসে স্লিপে ক্যাচও দিয়েছিলেন। কিন্তু সহজ সেই ক্যাচ ফসকে আফসোসে মাটি চাপড়াতে থাকেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা।

ব্যক্তিগত ২৩ রানের মাথায় তাওহিদ হৃদয়ও জীবন পেয়েছিলেন। কুলদীপ যাদবের বলে মিডঅফে ক্যাচ দিয়েছিলেন, মিস করেন হার্দিক পান্ডিয়া। ঠিক এর পর থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শুরু হয় তাওহিদ ও জাকেরের। ২৯ ওভারে ১০০, ৩৬ ওভারে ১৩৬ রান– এভাবেই এগোতে থাকেন দু’জন। ৮৭ বলে ফিফটি করেন জাকের। তাওহিদ করেন ৮৫ বলে। সমান তালেই এগোচ্ছিলেন দু’জন। হোঁচটা আসে মোহাম্মদ শামির বলে। অফ কাটার বলটি গায়ের জোরে স্লগ করতে চেয়েছিলেন জাকের। টাইমিং না হওয়ায় লংঅনের কাছাকাছি বিরাট কোহলি ক্যাচ নিয়ে নেন। সেই সঙ্গে একটি রেকর্ডেও সাক্ষী হয়ে যান কোহলি। ওয়ানডেতে ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫৬ ক্যাচ মোহাম্মদ আজাহার উদ্দিনের। এদিন কোহলিরও ১৫৬টি হয়ে যায়। রেকর্ড হয় বাংলাদেশের ষষ্ঠ উইকেট জুটির ২০৬ বলে ১৫৪ রানও। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এর আগে এতবড় রানের কোনো জুটি হয়ন ষষ্ঠ উইকেটে। সেই হিসাবে তাওহিদ-জাকেরের নাম লেখা থাকবে। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রেকর্ড জুটিটি ছিল জাকের ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১৫০। জাকেরের ১১৪ বলে ৬৮ রানের ইনিংসটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর অঘটন ঘটে তাওহিদের পায়ে ক্র্যাম্প করায়। ৮৫ রানে থাকতেই এই চোট পান তিনি। এর পর বাকি ১৫টি রান তিনি নিয়েছেন রীতিমতো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পায়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর শামির বলে উইকেট দিয়ে আসেন তিনি। শেষ হয় তাঁর ১৮৫ মিনিটে ১১৮ বলের সংগ্রাম। তিনি সুস্থ থাকলে হয়তো দলের স্কোর আড়াইশর কাছাকাছি পৌঁছাতে পারতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ২২৮ রানেই শেষ হয়। তাওহিদের এই হৃদয় নিংড়ানো ইনিংসের দিনে ভারতীয় অভিজ্ঞ পেসার মোহাম্মদ শামিও একটি রেকর্ড গড়েছেন। এদিন ৫৩ রান দিয়ে তিনি নিয়েছেন ৫ উইকেট। আইসিসির টুর্নামেন্টে ওয়ানডে ফরম্যাটে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০ উইকেট শিকার করলেন তিনি। ৫৯ উইকেট নিয়ে যে রেকর্ড আগে ছিল জাহির খানের।

দুবাইয়ের এই মাঠে ২২৮ রান কি যথেষ্ট? ইনিংস বিরতির সময় এসব নিয়ে আলোচনা শেষেই রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল এর উত্তর দিয়ে দেন ৬৯ রানের ওপেনিং জুটি গড়ে। তাসকিন, মুস্তাফিজ ও তানজিম– বাংলাদেশের তিন পেসারকেই সাবলীলভাবে খেলে যান দুই ওপেনার। মুস্তাফিজের এক ওভারে পর পর দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ওয়ানডেতে ১১ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছে যান রোহিত। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তাসকিনের বলে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন ৪১ রান করা ভারতীয় অধিনায়ক। ২২ রান করা কোহলি পরাস্ত হন রিশাদ হোসেনের লেগস্পিনে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে। এর পর শ্রেয়াস আয়ারকে কাটারে বিভ্রান্ত করে শিকার করেন মুস্তাফিজ। অক্ষর প্যাটেলকেও প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে দেন রিশাদ। ১৪৪ রানে ৪ উইকেট হারানো ভারতের তখনও দরকার ছিল ১১৯ বলে ৮৫ রানের। দুবাইয়ের পিচে তখন রান তোলা খুব সহজ মনে হচ্ছিল না তখন। সুযোগও এসেছিল, তাসকিনের বলে কে এল রাহুলের তোলা অতি সহজ ক্যাচ মিডউইকেটে দাঁড়িয়ে মিস করেন জাকের। হাতছাড়া হয় রাহুলকে রানআউট করার একটা সুযোগও। সেই রাহুলকে নিয়েই শেষ পর্যন্ত ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নেন শুভমান গিল। ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। দুবাইয়ের পর বাংলাদেশ দলের গন্তব্য এখন পাকিস্তান। সোমবার রাওয়ালপিন্ডিতে পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুখোমুখি হবেন শান্তরা।

আরও পড়ুন

×