ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ক্যাবরেরার কৌশল নিয়ে প্রশ্ন

ক্যাবরেরার কৌশল নিয়ে প্রশ্ন

রাশেদুল ইসলাম, সাবেক ফুটবলার, জাতীয় দল

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫ | ১০:৪২

মঙ্গলবার জাতীয় স্টেডিয়ামে যে বাংলাদেশ দলটি খেলল, সেই দলটির কোচ সত্যিই স্প্যানিশ তো? কোথায় সেই স্প্যানিশ ঘরানার আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজি বা যা হলো, সেটাই বা কী?

পুরো ম্যাচে বাংলাদেশের আক্রমণভাগের রসায়নে সিঙ্গাপুরের রক্ষণভাগ ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে– এমন কোনো দৃশ্য কি আপনার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে? মনে করার জন্য কিছুক্ষণ সময় নিন। আমার অন্তত এই মুহূর্তে পড়ছে না। ফুটবলবিষয়ক এক ওয়েবসাইটের পরিসংখ্যান বলছে, ২-১ গোলে হারের ম্যাচে বাংলাদেশের মাত্র একটি শট ঠেকাতে হয়েছে সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক ইয়াসিন মাহবুবকে। এমন দলগত ফুটবল দেখার পর যখন ‘ক্লোজড ডোর প্র্যাকটিস’ কথাটা শুনতে হয়, তখন ‘ক্লোজড ডোর’ কথাটির যথার্থতা আর থাকে বলে মনে হয় না!

 ১৬১ র‌্যাঙ্কিংধারী সিঙ্গাপুর ঢাকার মাঠে এমন সাধারণ মানের ফুটবল খেলবে– দর্শক হিসেবে আমার কাছে এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। এই দলটিকেই কিনা বাগে পেয়েও হারাতে পারল না বাংলাদেশ। ‘বাগে’ পাওয়ার কথাটি কেন আসছে, সেটি বোঝার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছর মার্চে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে তাদের ঘরের মাঠে নামার আগ পর্যন্ত।

সাধারণত সিঙ্গাপুর আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে অভ্যস্ত। কিন্তু ঢাকার দুর্বিষহ গরম ও ভারী মাঠের জন্য আক্রমণাত্মক কৌশলের পরিবর্তে আসিয়ান দলটির অবলম্বন ছিল সাবধানী ফুটবল। হাই প্লেসিংয়ের পরিবর্তে তারা করেছে দলগত মিড ব্লক ও লো ব্লক। প্রথাগত কোনো উইঙ্গার না খেলিয়ে দুটি লাইনে পাঁচ মিডফিল্ডার খেলিয়ে মিডল করিডোরে পায়ের জঙ্গল বানিয়ে গোলের দরজা বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করেছেন সিঙ্গাপুরের জাপানি কোচ সুমু অগুরা। উদ্দেশ্য পরিষ্কার, এই গরম আবহাওয়ায় প্রতিপক্ষের পায়ে বল থাকা অবস্থায় বলের পেছনে বেশি দৌড়ঝাঁপ না করে বল দখলে আসার পর কার্যকরী ফুটবল খেলা। নিজেরা গোল হজম না করলে একটা সময় গোল আসবেই!  এবং শেষ পর্যন্ত এই কৌশলেই সফল তারা।

সাধারণত এই ট্যাকটিক্সের পাল্টা স্ট্র্যাটেজি হলো মাঝমাঠের ট্রাফিক জ্যাম কাটাও আর উইংয়ে খেলা ছড়িয়ে দাও। কিন্তু জাপানি অগুরাকে জবাব দিতে স্প্যানিশ ক্যাবরেরা তাঁর দলকে নিয়ে কী করতে চাইলেন, বোঝা গেল না। উইংয়ে খেলা ছড়িয়ে দিতে উইঙ্গার রাকিব হোসেনের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ম্যাচে বাংলাদেশের একমাত্র গোলদাতা রাকিবকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা গেছে বলে মনে হয় না।

অর্থনীতির ভাষায় বলতে হয়, ক্যাবরেরা তাঁর হাতে থাকা পর্যাপ্ত পুঁজির ব্যবহার করতে পারেননি। প্রত্যাশিত ৪-২-৩-১ ফরমেশনে দলকে খেলালেন। রক্ষণভাগের ওপর ছায়া বাড়াতে ভুটান ম্যাচের গোলদাতা সোহেল রানার জায়গায় মোহাম্মদ হৃদয়, রাইটব্যাক তাজ উদ্দিনের জায়গায় আহাদ তপু। শমিত সোমকে জায়গা দিতে ছেঁটে ফেলা হলো জামাল ভূঁইয়াকে।

একাদশে মোটাদাগে সবচেয়ে বড় দুটি প্রশ্ন– নাম্বার নাইন পজিশনে রাকিব কেন? শেষের দিকে সেই রাকিবকেই কিনা খেলতে দেখা গেল রাইটব্যাক পজিশনে। এতে দলের আক্রমণভাগের সেরা উইঙ্গারের পুরো সামর্থ্য কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। একই সঙ্গে রাইট ওয়াইড মিডফিল্ডার হিসেবে কাজেম শাহকে বেছে নেওয়াটাও ভুল হিসেবে ফুটে উঠেছে। আবার পুরো দস্তুর ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হৃদয়কে যখন বেছে নেওয়াই হলো, তাহলে হামজাকে আরও একটু ওপরে উঠতে দেওয়ার লাইসেন্স কেন দিলেন না ক্যাবরেরা!

আর গোল দুটি হজমে বিশেষ করে বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা যে ভুলগুলো করলেন, তার সমাধান এই পর্যায়ে এসে আর কোনো কোচের হাতে থাকে না। ‘বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা অব দ্য বল মার্কিং করতে জানে না’–যে কোনো বিদেশি কোচ এলেই এ কথা বারবার বলেন। কিন্তু এই আন্তর্জাতিক লেভেলে এসে এই বিষয়গুলো তো আর তপু, সাদদের শেখানোর সুযোগ নেই। তাই চরম উত্তেজনার পারদ ছড়ানো ম্যাচটি শেষ হলো গোঁজামিলের মধ্য দিয়ে।

আরও পড়ুন

×