বৃষ্টির আগেই ঝড় উঠেছিল মাদ্রিদে

বৃষ্টির মধ্যেও বোঝা যাচ্ছে লিওনেল মেসির মুখের হতাশা- এএফপি
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২১ | ২১:১৪
প্রকৃতিকেও তাহলে মেসির বিরহে পেয়ে বসেছিল! নইলে কি আর মাদ্রিদের আকাশ এভাবে ভেঙে পড়ে! ৪৫টি এল ক্ল্যাসিকোর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মানুষটির জন্য প্রকৃতির এই কান্না তো স্বাভাবিক। তাই বলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ কিন্তু এক চুল ছাড় দেয়নি। বৃষ্টি নামার আগেই দুই গোল করে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে ফেলেন তারা। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে জিতে আর্জেন্টাইন জাদুকরের বিদায়ী ক্ল্যাসিকোটা তেতো করে দেন বেনজেমা-ক্রুসরা। যদিও বার্সা কর্তৃপক্ষ বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছে যে, এটা মেসির শেষ ক্ল্যাসিকো নয়। এজন্য অবশ্য মৌসুমের শেষ অবধি অপেক্ষা করতে হবে।
তবে ঝুম বৃষ্টিতে মাঠ পিচ্ছিল হলেও গত কয়েক বছরের মধ্যে সেরা ক্ল্যাসিকোর দেখা মিলেছে আলফেদ্রো ডি স্তেফানো স্টেডিয়ামে। আর রোমাঞ্চকর জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেও উঠে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। যদিও গতকাল রাতেই তাদের টপকে আবার শীর্ষস্থানে দখল নিতে পারে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ। গতকাল রাতে রিয়াল বেটিসের মুখোমুখি হবে লুই সুয়ারেজবিহীন অ্যাতলেটিকো। ৩০ ম্যাচে রিয়ালের পয়েন্ট ৬৬, এক ম্যাচ কম খেলে তাদের সমান পয়েন্ট অ্যাতলেটিকোর। হেড টু হেডে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে রিয়াল। খুব একটা পিছিয়ে নেই বার্সাও। ক্ল্যাসিকো হারের পরও মাদ্রিদের দুই দল থেকে মাত্র এক পয়েন্ট পিছিয়ে তারা, ৩০ ম্যাচে বার্সার পয়েন্ট ৬৫।
তবে পয়েন্টের ব্যবধান যাই হোক, ইতিহাস কিন্তু বলছে এ মৌসুমে বার্সার শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ক্ল্যাসিকো হারের সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে গেছে। লা লিগার ৯২ বছরের ইতিহাসে দুই (হোম ও অ্যাওয়ে) ক্ল্যাসিকো হেরে এখন পর্যন্ত কোনো মৌসুমেই শিরোপা জিততে পারেনি কাতালান ক্লাবটি। করোনাকালে নতুন ইতিহাস হবে কী!
শনিবার রাতে তিনটি দারুণ গোলের সঙ্গে উভয় দলের মোট চারটি শট পোস্টে লেগে ফিরে এসেছে। লাল কার্ড দেখেছেন রিয়ালের ক্যাসেমিরো। আর শেষ মুহূর্তে তো বার্সার আক্রমণের তোড়ে ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল রিয়ালের। তখন বার্সার একটি পেনাল্টির জোরালো আবেদন নাকচ করে দেন রেফারি। বিষয়টি নিয়ে ভালোই উত্তেজনা ছড়িয়েছিল মাঠে, কোচ রোনাল্ড কোম্যান হলুদ কার্ড পর্যন্ত দেখেন। যোগ করা সময়ে বদলি খেলোয়াড় ইলাইশ মুরিবার শট ক্রসবারে লেগে ফিরে এলে সমতা ফেরানোর শেষ সুযোগটি হারায় বার্সা। এর মিনিট দশেক আগে ক্যাসেমিরোর লাল কার্ডের ফাউলে ফ্রি কিক থেকে সমতা ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন মেসিও। কিন্তু তার ফ্রি কিক জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। এ নিয়ে টানা সাত ক্ল্যাসিকো গোলশূন্য থাকলেন তিনি।
উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে ১৩ মিনিটে স্বাগতিক রিয়ালকে দুর্দান্ত এক ব্যাক হিল ফ্লিকে এগিয়ে দেন করিম বেনজেমা। পনেরো মিনিট পর টনি ক্রুসের ফ্রি কিক বার্সার দু'জনের শরীরে লেগে জালে চলে গেলে ২-০-তে এগিয়ে যায় রিয়াল। এ গোলটি ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের গতির ফসল। তার দুরন্ত গতির সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পেরেই এই ব্রাজিলিয়ানকে ফেলে দিয়েছিলেন বার্সার এক ডিফেন্ডার। সাত মিনিট পর ভিনিসিয়ুসের পাসে ভালভার্দের শট পোস্টে লাগলে ৩-০ করতে পারেনি রিয়াল। বিরতির আগে অসাধারণ এক গোল প্রায় করে ফেলেছিলেন মেসি। তার জাদুকরী কর্নার সবাইকে ফাঁকি দিয়ে রিয়ালের জালে জড়িয়ে যাচ্ছিল প্রায়। কিন্তু ভাগ্য খারাপ, গোলরক্ষক কোর্তুয়াকে বোকা বানিয়েও দূরের পোস্টে গিয়ে বাধা পায় বলটি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি নামে। সঙ্গে ঝড়ো বাতাসও ছিল। তবে এই প্রতিকূল পরিবেশেও বার্সা ঠিকই আক্রমণের পর আক্রমণ শানিয়ে যায়। ৬০ মিনিটে এর ফলও পায় তারা। আলবার ক্রসে গ্রিজম্যানের ডামিতে ডিফেন্ডার মিনগেজা ব্যবধান কমালেও হার এড়াতে পারেনি বার্সা। ১৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর মাদ্রিদের ভেজা মাঠে যেন পিছলে গেল বার্সার শিরোপা স্বপ্ন।