সাফল্যের গল্প
আত্মবিশ্বাসের চাকায় হুসাইনের স্বপ্নপূরণ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ | ১১:০৩ | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ | ১১:০৩
স্বনামধন্য ফার্মেসিতে ‘এ গ্রেড’ ফার্মাসিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ হুসাইন মিয়া। ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক শেষ করে গত বছর কাজে যুক্ত হন। কিন্তু আর দশজন সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মতো ক্যারিয়ার গড়ার পথটা মসৃণ, নির্ঝঞ্ঝাট ছিল না হুসাইনের। সাফল্যের খোঁজ পেতে জীবনের চারটি বছর তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে এক বন্ধুর পথ। সম্মুখীন হতে হয় নিদারুণ বাস্তবতার। কঠিন যাত্রায় হুসাইন মিয়ার সঙ্গী ছিল বাইসাইকেল। আর কিছু মানুষের একান্ত সহযোগিতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালে টাঙ্গাইল থেকে রাজধানী ঢাকায় আসেন হুসাইন মিয়া। দূর্ভাগ্যজনকভাবে, ঠিক তার পর থেকেই কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে বড় ধরণের আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয় তার পরিবার। ওই সময় ঢাকার নতুন বাজার এলাকায় থাকতেন হুসাইন। আগে টিউশনি করে হাতখরচ চালানোর অভিজ্ঞতা থাকলেও অপরিচিত শহরে হঠাৎ যেন অকূল পাথারে পরে যান। টিউশনিও সোনার হরিণ মনে হতে থাকে। বাড়ি থেকে প্রতি মাসে অল্প কিছু টাকার যোগান হলেও পড়াশোনার খরচ চালিয়ে টিকে থাকা তার জন্য রীতিমতো দুঃসহ হয়ে উঠে। তাই এক পর্যায়ে আর্থিক স্বাধীনতার আশায় অনলাইন ফুড ও গ্রোসারি ডেলিভারি রাইডার হিসেবে কাজ শুরু করেন হুসাইন মিয়া।
কঠিন সময়ের স্মৃতিচারণ করে হুসাইন মিয়া বলেন, ছাত্রাবস্থা থেকেই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা ছিল। ২০১৯ সালের এপ্রিলে আমি ফ্রিল্যান্সার রাইডার হিসেবে ফুড ডেলিভারি’র কাজ শুরু করি। সারা দিন ক্লাস-পরীক্ষা শেষে সন্ধ্যায় হুসাইন নেমে পড়তেন সাইকেল নিয়ে। ছুটির দিনে অতিরিক্ত আয়ের আশায় সকাল থেকেই ডেলিভারির কাজ শুরু করে দিতেন। তবে রাতে বাড়ি ফিরে পড়াশোনাও ঠিকঠাক চালিয়ে নিতেন। ২০২২ সাল অবধি মোট চার বছর ফুডপ্যান্ডায় রাইডার হিসেবে কাজ করেন।
ফুড ডেলিভারি’র আয় দিয়ে হুসাইনের অর্থ সংকট অনেকটাই কেটে যায়। তারপর অল্প অল্প করে সঞ্চয় শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার সুবিধার্থে জমানো টাকা দিয়ে কেনেন ল্যাপটপ। প্রতি মাসে কিছু টাকা বাড়িতেও পাঠানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। পরিবারের দুঃসময়ে পাশে থাকার সুযোগ হুসাইন মিয়ার ভেতরে সঞ্চার করে নতুন আত্মবিশ্বাস।
হুসাইনের জীবন সংগ্রামকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের ভালোবাসার পাশাপাশি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকেও সবসময় সহযোগিতা পেয়েছেন। হুসাইন জানালেন, ফুড ডেলিভারির কাজ করে উপার্জনের সঙ্গে আমি দুটি বিষয় শিখেছি, যা আমাকে ব্যক্তিগত পর্যায়েও সহযোগিতা করছে। একটি হলো সময়ানুবর্তিতা। আর অন্যটি সদ্ব্যবহারের উপকারিতা। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ডেলিভারি পৌঁছে দিতে রেস্তোরাঁ এবং গ্রাহকের কাছে ঠিক সময়মতো হাজির হতে হতো। আর ডেলিভারির আগে ও পরে গ্রাহকদের সঙ্গে কখনও কখনও কথা বলতাম, দ্রুত খাবার পৌঁছে দিলে তারাও খুশি হতেন, পরিচিত হতেন। ফলে ভালো গ্রাহকসেবার গুরত্ব শিখেছি। দুটি শিক্ষা এখন আমার বেশ কাজে লাগছে।
চার বছর অধ্যবসায় চালিয়ে যাওয়ার পর ফার্মেসি বিভাগ থেকে সফলভাবে ডিগ্রি অর্জন করেন হুসাইন মিয়া। অল্প দিনের মধ্যেই নিজের যোগ্যতায় ‘এ গ্রেড’ ফার্মাসিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। প্রিয় বাইসাইকেলটা নিয়ে এখনও মাঝেমধ্যে ঘুরে বেড়ান হুসাইন। ইচ্ছে আছে, ভবিষ্যতে শীর্ষস্থানীয় কোনো ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে ফার্মাসিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়বেন। আত্মবিশ্বাস আর সৎ সাহস থাকলে কোনো কিছুই যে অসম্ভব নয়, তার বড় উদাহরণ হুসাইন।
/এসএইচ/
- বিষয় :
- ফুডপ্যান্ডা