ভয়েজার-১
অসীম গভীর থেকে সাড়া

.
তুহিন তৌহিদ
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪ | ০১:১৮
বিরামহীনভাবে ভয়েজার-১ ছুটে চলেছে অনন্তের দিকে। থামার অবকাশ নেই। সৌরজগতের গণ্ডি পার হয়ে এখন এটি গভীর মহাশূন্যে। বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশা, অলৌকিক দূরত্ব থেকে ভয়েজার-১ যেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, বার্তা পাঠায়। কিন্তু এত দূরে যাওয়ার পর কি আর তাদের কথা এর মনে আছে? ভয়েজার-১ প্রমাণ করেছে, পৃথিবীর সঙ্গে তার সম্পর্ক একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। দীর্ঘ বিরতির পর সম্প্রতি গভীর মহাশূন্য থেকে এটি সাড়া দিয়েছে।
৪৬ বছর আগে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে মহাকাশযান ভয়েজার-১। এখন এটিই মানুষের তৈরি পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরত্বে যাওয়া বস্তু। এরই মধ্যে এটি মহাশূন্যের ২ হাজার ৪০০ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে। এটি এখন এতটাই দূরে, তার কাছে বেতার বার্তা পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ২২ ঘণ্টারও বেশি।
প্রাথমিকভাবে এটিকে বৃহস্পতি, শনি গ্রহসহ সৌরজগতের অভ্যন্তরে গবেষণায় কাজে লাগাতে তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপণের সময় ভয়েজার-১-এর অভিযানের সময়সীমা ধরা হয়েছিল পাঁচ বছর। কিন্তু ভাগ্যক্রমে এ অভিযান এখন ৫০ বছর হতে যাচ্ছে। ২০১২ সালের আগস্টে এটি ইন্টারস্টেলার স্পেস অতিক্রম করে। এর মাধ্যমে ভয়েজার-১ সৌরজগতের বাইরে যাওয়া প্রথম কোনো মানবসৃষ্ট বস্তুতে পরিণত হয়। বর্তমানে এটি ঘণ্টায় ৬০ হাজার ৮২১ কিলোমিটার বেগে মহাশূন্যে ছুটে চলেছে, যেন এক লাগামহীন ঘোড়া।
যাত্রাপথে অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে ভয়েজার-১। এটি সূর্যের নিক্ষেপ করা গ্যাসের বুদ্বুদের ভেতর দিয়ে গেছে; মোকাবিলা করেছে সৌরজগতের বাইরের অংশের গ্যাস, মহাজাগতিক ধুলা ও চুম্বকীয় প্রভাব। তবে সম্প্রতি এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিজ্ঞানীদের। এর অভ্যন্তরে যে চিপ স্থাপন করা হয়েছিল, সেটি খারাপ হওয়ার কারণে এমনটা হয়। এতে পৃথিবীতে যেসব কম্পিউটারের সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিল, তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
মাসের পর মাস ধরে বিজ্ঞানীরা কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তারা দেখতে পান, ভয়েজার তাদের পাঠানো সংকেত গ্রহণ করছে, কিন্তু পাল্টা বার্তা বা সংকেত পাঠাচ্ছে না। অবশেষে কিছু কোড পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা এটি ঠিক করতে সক্ষম হন। গত এপ্রিলের শেষ দিকে নাসা জানায়, ভয়েজার-১ সাড়া দিচ্ছে। তারা এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন। এখন এটি বার্তা পাঠাতে পারবে।
ভয়েজার-১ আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের অভিমুখে এগোচ্ছে। এর মধ্যে রেডিওস্টোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটরস বা আরটিজি স্থাপন করা রয়েছে, যা ক্রমগলিত প্লুটোনিয়াম থেকে সৃষ্ট উত্তাপকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তর করে। এ প্রক্রিয়ায় প্লুটোনিয়াম ক্রমাগত গলে যাওয়ার মধ্যে থাকায় প্রতিবছর এটি আগের তুলনায় কম শক্তি উৎপাদন করছে। কতদিন পর্যন্ত ভয়েজার এভাবে চলতে পারবে, তা নিশ্চিত নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরও কয়েক বছর ধরে এটি চলবে।
ভয়েজার-১ পুরোপুরি নিঃসঙ্গ নয়। তার সঙ্গী ভয়েজার-২ অবশ্য কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। এটি কিছু ধীরগতিতে ছুটছে। বর্তমানে ভয়েজার-২ পৃথিবী থেকে ২ হাজার কোটি কিলোমিটার দূরত্বে আছে। এরা দু’জন যদি প্রতি সেকেন্ড ১৫ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি বেগ চলে, তাহলে হাজার হাজার বছরেও তারা আরেকটি নক্ষত্রের কাছে যেতে পারবে না।
যে কম্পিউটার দুটির সঙ্গে দুই ভয়েজারকে সংযুক্ত করে রাখা হয়েছে, সেগুলো অনেক পুরোনো। এগুলোর মেমোরি একেবারেই সামান্য– ৭০ কিলোবাইটেরও কম, যা কোনো অল্প রেজল্যুশনের ছবির সমান। এ ছাড়া তথ্য রেকর্ডের জন্য পুরোনো পদ্ধতির ডিজিটাল টেপ রয়েছে। সূত্র: বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন।
- বিষয় :
- মহাশূন্য