ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

লাউড়ের দুর্গে মিলল আবাসিক ভবন

লাউড়ের দুর্গে মিলল আবাসিক ভবন

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে লাউড় রাজ্যের রাজধানীর দুর্গ এলাকায় চলছে খননকাজ - সমকাল

পঙ্কজ দে, সুনামগঞ্জ

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১২:৪৫ | আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১৪:৫০

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাউড় রাজ্যের রাজধানীর দুর্গ এলাকায় দ্বিতীয় দফা খননকালে আবাসিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা আশা করছেন, আগামী দুই মাসে আরও অনেক প্রত্নবস্তুর হদিস মিলবে। যেগুলো এই অঞ্চল নিয়ে গবেষণা কাজে অনেক সহায়ক হবে।

২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে দুর্গ খননের প্রাথমিক কাজ শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। সে সময় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেছিলেন, 'তাহিরপুরের লাউড়ে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে, যেটি কয়েক যুগকে যুক্ত করবে।' দ্বিতীয় দফা খননে আবাসিক ভবন পাওয়া যাওয়ার মধ্য দিয়ে তার বক্তব্যের সত্যতা মিলল।

গতকাল মঙ্গলবার ড. আতাউর রহমান সমকালকে বলেন, প্রথম দফা খননে মাটির নিচে চারদিকে দেয়াল বেরিয়েছে। এর একদিকে ৫০ ফুট এবং অন্যদিকে ৭৫০ ফুট। দ্বিতীয় দফায় খনন শুরু হয়েছে গত ৯ জানুয়ারি। এরই মধ্যে প্রাচীন রাজধানীর আবাসিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী দুই মাসে গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক প্রত্নসামগ্রী পাওয়া যাবে।

এখানে একটি জাদুঘর স্থাপনসহ অন্যান্য উন্নয়নের জন্য ডিপিপি প্রণয়নের কাজ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পর্যটকদের থাকার জন্য আবাসিক ব্যবস্থাও হবে। ড. আতাউর রহমান জানান, আগামী ১৩-১৪ মার্চ লাউড়ের দুর্গ পরিদর্শনে আসবেন পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, সংস্কৃতি সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হান্নান মিয়া, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীনকালে শ্রীহট্ট (সিলেট) কয়েকটি খণ্ডরাজ্যে বিভক্ত ছিল। ত্রৈপুর রাজবংশের অধ্যুষিত স্থান ত্রিপুরা রাজ্য বলে সাধারণত কথিত হয়। ওই রাজবংশের অধিকার একসময় বরবক্রের সমস্ত বাম তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। শ্রীহট্টের তিন ভাগ পৃথক তিনজন নৃপতি শাসন করতেন। গৌড়, লাউড় ও জয়ন্তিয়া- এই তিন খণ্ডের নৃপতির অধীন ছিলেন আরও অনেক ক্ষুদ্র ভূমি মালিক। লাউড় রাজ্য ছিল সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ জেলার কিয়দংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। লাউড় ছিল একটি স্বাধীন রাজ্য। তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকায় লাউড়ের রাজধানী ছিল। এই রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ হলহলিয়া গ্রামে এখনও বিদ্যমান। এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেশব মিশ্র। তারা ছিলেন কাত্যান গোত্রীয় মিশ্র। তাদের উপাধি ছিল সিংহ। খ্রিষ্টীয় দশম অথবা একাদশ শতকে তিনি কনৌজ থেকে এখানে আসেন। দ্বাদশ শতকে এখানে বিজয় মাণিক্য নামে এক নৃপতি রাজত্ব করতেন। কারও কারও মতে, বঙ্গ বিজয়ের পর রাঢ় অঞ্চল মুসলমানদের হাতে চলে যাওয়ায় সেখানকার বিতারিত ও পরাজিত সভ্রান্তজন প্রাণ ও মান বাঁচানোর জন্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। তাদেরই একজন এখানে এসে রাজত্ব গড়ে তোলেন। রাঢ় শব্দ থেকেই লাউড় শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়। লাউড় রাজ্যের রাজধানী লাউড় ছাড়াও জগন্নাথপুর ও বানিয়াচংয়ে আর দুটি উপরাজধানী ছিল।

আরও পড়ুন

×