মুন্সীগঞ্জে আ.লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ১১

প্রতীকী ছবি
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২২ | ১১:৩৪ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২২ | ১৩:৪৭
মসজিদে নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলেন মনির হোসেন মোল্লা (৭০)। ওই এলাকায় তখন আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু'টি পক্ষের মধ্যে চলছিল তুমুল গোলাগুলি। আতঙ্কিত বৃদ্ধ কোন দিকে যাবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এরমধ্যেই গুলি এসে বিদ্ধ হয় তার শরীরে। লুটিয়ে পড়েন তিনি। সোমবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জ সদরের বকুলতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখানে রাত ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এদিকে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের ওই গোলাগুলির ঘটনায় আরও ১১জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নিহত মনিরের মেয়ে সানিয়া হোসেন সমকালকে জানান, তার বাবা একসময় কৃষিকাজ করতেন। এখন তার দুই ভাই বিদেশে আছেন। তারা বাবাকে কোনো কাজ করতে দেন না। তাছাড়া বয়সের কারণেও তিনি অনেকটা ভারাক্রান্ত ছিলেন। বিকেলে তিনি স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়তে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে বাসার অদূরে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তখন ওই এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলি চলছিল। তবে যে পথে মনির ফিরছিলেন, সংঘর্ষের স্থানটি তার থেকে কিছুটা দূরে। হঠাৎ গুলি এসে তার বুক ও হাতে লাগে। আশেপাশের লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. রুহুল আমিন জানান, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মুন্সীগঞ্জ আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে দুপুরের পর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় গোলাগুলি হয়। এরমধ্যে একটি পক্ষ আলী হোসেন ও অপরপক্ষ সুরুজ হোসেন মেম্বারের অনুসারী। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই আধিপত্য নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গত ৬ মাসে তারা বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এরই জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। তাতে মনির হোসেন ছাড়াও আরও ১১ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ জন হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ অন্যরা হলেন- সোলারচর এলাকার শাকিল সিকদারের ছেলে আলভী, মিজানের ছেলে রিমন, আবুল খায়েরের ছেলে মো. টিটু, আবু শেখের ছেলে আসাদ বেপারী, আরমান গাজীর ছেলে আশিক, রহমানের ছেলে হৃদয়, হিরা সরকারের ছেলে শরীফ, নাসির উদ্দিনের ছেলে রিয়াজ, নুর মোহাম্মদের ছেলে রাসেল, তেতুলিয়া গ্রামের জসীম উদ্দিনের ছেলে মাহিম, চর আবদুল্লাহ্ এলাকার জমসেদ নাসের, সোলারচর এলাকার রহমানের ছেলে হাসান, ফরিদ হোসেনের ছেলে আসলাম, জাজিরা এলাকার নুরু বেপারীর ছেলে ফাহাদুল ও চরআবদুল্লাহ এলাকার মৃত ছিটু নায়েবের ছেলে আলী নায়েব।
মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল-মামুন জানান, সংঘর্ষে একজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংবাদ পেয়েছি। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ইউপি নির্বাচনের পর থেকে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিবার্চনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল হক মোল্লা ও আধারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ হোসেন মেম্বারের লোকজন দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী হোসেন সরকারের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে।
দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আলী হোসেন বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন বিকেলে এলাকায় এসে আমার লোকজনের ওপর হামলা চালায়। একজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায়। বাকিদের চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া হয়।
আধারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ হোসেন বলেন, আলী হোসেন সরকারের কর্মী সমর্থকদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জের ধরে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে।