আসামিকে তুলে নিয়ে কাউন্সিলর-পুলিশের মুক্তিপণ আদায়

ভাঙ্গুড়া থানা। ছবি-সংগৃহীত
পাবনা অফিস
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২২ | ০৮:৪৪ | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২২ | ০৮:৪৫
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় আসামিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কর্মকর্তা ও পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। আসামি জামাত আলী ভাঙ্গুড়া পৌর এলাকার সরদারপাড়া মহল্লার বাসিন্দা।
গত রোববার মধ্যরাতে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় স্ত্রী ও মেয়েকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। পরে বুধবার ভাঙ্গুড়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদ হাসানকে প্রত্যাহার করা হয়। আরেক অভিযুক্ত জহুরুল ইসলাম ভাঙ্গুড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, জাহিদ ও জহুরুল রোববার রাত ১১টার দিকে জামাত আলীর বাড়িতে গিয়ে জমি নিয়ে বিরোধের একটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে জানিয়ে নির্জন স্থানে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বাধা দিলে তাঁরা জামাত আলীর স্ত্রী আসমা খাতুন ও মেয়ে রিয়া আক্তার মিমকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে জামাত আলীকে হাতকড়া পরিয়ে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যান তাঁরা। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পারভাঙ্গুড়া কবরস্থান এলাকায় নিয়ে জামাত আলীর কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে কাউন্সিলর জহুরুল জামাত আলীর বাড়ি থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা ও ৯০ হাজার টাকার চেক নিয়ে যান। এর পর রাত ১টার দিকে জামাত আলীকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। পরদিন পৌর শহরের শরৎনগর বাজারের অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে চেক দিয়ে টাকা তোলেন তুহিন নামের এক ব্যক্তি।
ঘটনার পর জামাত আলী আত্মগোপনে। তাঁর মেয়ে রিয়া আক্তার অভিযোগ করেন, আমার বাবার বিরুদ্ধে পরোয়ানার বিষয়ে কিছুই জানি না। মধ্যরাতে কাউন্সিলর জহুরুল ও পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদ কোনো কাগজপত্র না দেখিয়েই তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। বাধা দিলে আমাকেও হাতকড়া পরান। মা এগিয়ে এলে তাঁকে ও আমাকে মারধর করেন জাহিদ। বাবা পড়ালেখা না জানায় বাড়ির ফোন নম্বর বলতে পারেননি। পরে কাউন্সিলর বাড়ি এসে ফোন ধরিয়ে দিয়ে দেড় লাখ টাকা দিতে বলেন। টাকা দেওয়ার পর বাবাকে বাড়িতে রেখে যান তাঁরা।তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জাহিদ হাসান বলেন, 'জামাত আলী হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টের রোগী। পরোয়ানা থাকার পরও মানবিক কারণে গ্রেপ্তার না করে জামিনের বিষয়ে একটু দূরে নিয়ে আমরা কথা বলেছি। টাকা-পয়সা নেওয়া এবং স্ত্রী-মেয়েকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ভিত্তিহীন।' কাউন্সিলর জহুরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভাঙ্গুড়া থানার ওসি রাশিদুল ইসলাম জানান, অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। একজনের অপকর্মের দায় পুরো বিভাগ নেবে না। জাহিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি জানান, ঢাকায় আছেন তিনি। বিষয়টি অ্যাডিশনাল এসপির কাছ থেকে জেনেছেন। তদন্ত করতে বলা হয়েছে। এএসআই জাহিদকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে আনা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।