বৃদ্ধা মাকে বের করে দেন সন্তান-পুত্রবধূরা, রাস্তায় পড়ে ছিলেন ৪৮ ঘণ্টা

বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৯:৫১ | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৯:৫১
যে মা সন্তানদের বড় করে তুলেছেন, নিজের জমি লিখে দিয়েছেন সন্তানদের নামে, সেই মাকে অত্যাচার করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন চার ছেলে। দিনের পর দিন না খেয়ে থেকে সন্তান ও পূত্রবধূর কাছে একমুঠো ভাত চাওয়ায় গর্ভধারিনীকে এই সাজা দেওয়া হয়েছে। অসুস্থ বৃদ্ধা কনকনে শীতে দু'দিন রাস্তার পাশে পড়েছিলেন। তার খোঁজ রাখেনি কেউ। অবশেষে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুরের নকলা উপজেলা শহরের কলাপাড়া গ্রামে।
নকলা উপজেলা শহরের কলাপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৭২)। তার চার ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে বড় ছেলে বাড়িতে ও তিন ছেলে ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তাদের স্ত্রী-সন্তানরাও বাড়িতে থাকেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর ফাতেমা বেগম তার নিজের নামে যা ছিল সবকিছু ছেলে-মেয়েদের লিখে দেন। এরপর থেকেই সন্তান ও পুত্রবধূদের চেনারূপ পাল্টে যায়। মায়ের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন ছেলেরা। শুরু হয় মায়ের ওপর অত্যাচার। পুত্রবধূরা নানা অজুহাতে শাশুড়ির ওপর অত্যাচার চালাতেন। ছেলেদের বিচার দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। একমাত্র মেয়েটিও মায়ের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন। সব দোষ মায়ের। অবশেষে গত ১ ডিসেম্বর বৃদ্ধা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। কলাপাড়া গ্রামের সড়কের পাশে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা না খেয়ে পড়ে থাকেন ওই বৃদ্ধা। একপর্যায়ে ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পথচারীরা ঘটনাটি সাংবাদিকদের জানান। খবরটি যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কানে। তিনি শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। শুরু হয় চিকিৎসা। শনিবার দুপুরের দিকে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন ইউএনও।
ইউএনও বুলবুল আহমেদ বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, পুলিশ বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা বৃদ্ধা ফাতেমা বেগমের বাড়ি গিয়েছি। সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা স্বেচ্ছায় বৃদ্ধার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। সরকারের তরফ থেকে জেলা প্রশাসক ঘর নির্মাণের জন্য ফাতেমা বেগমকে দুই বান্ডেল ঢেউ টিন, ছয় হাজার টাকা ও দু'টি শাড়ি দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, ওই বৃদ্ধার ভরসা এখন সন্তানরা। জীবনের শেষ ক'টা দিন যদি তারা মায়ের দায়িত্ব না নেন, তবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।