ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ভেঙে ফেলা হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্য কলসকাঠী জমিদারবাড়ি

ভেঙে ফেলা হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্য কলসকাঠী জমিদারবাড়ি

বরিশাল ব্যুরো

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ১০:১৮ | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ১০:১৮

তিন শতাধিক বছরের ইতিহাসের সাক্ষী বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী জমিদারবাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা দাবি করে অবকাঠামো ভাঙার কাজ শুরু করেছে একটি পরিবার।

এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। তাঁরা বাড়িটি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।

রোববার সকালে ভবন ভাঙার কাজ শুরু করেন মালিকপক্ষ দাবিদারদের নিযুক্ত শ্রমিকরা। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজল চন্দ্র শীল সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে বিকেল ৩টার দিকে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেন।

কলসকাঠী ইউনিয়নে ১৩ জন জমিদার ছিলেন। তাঁদের বাড়িগুলো ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে। সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও ভূমিদস্যুদের জালিয়াতিতে বেশিরভাগ বাড়ি প্রায় ধ্বংসের পথে। এসব জমিদারবাড়ি দেখতে কলসকাঠীতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসেন।

কলসকাঠী বাজারসংলগ্ন দুই বিঘা জমিতে জমিদার জানকী বল্লভ রায় চৌধুরীর বাড়িটিতে অযত্ন-অবহেলায় কয়েক বছর ধরে ভূতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। বাড়িটি ইট-সুরকি ও পোড়ামাটির কারুকার্যে ঘেরা। প্রবেশপথে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন মঠ ও বেশকিছু ভাঙা মন্দির। পাশেই শান বাঁধানো পুকুর। প্রতি বছর নভেম্বরে এ বাড়িতে জগদ্বাত্রী পূজায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন।

আটজন শ্রমিক রোববার সকালে বাড়ির মূল ভবন ভাঙার কাজ শুরু করেন। শ্রমিকরা জানান, জমিদারের উত্তরাধিকাররা তাঁদের কাজে নিযুক্ত করেছেন।

জানা গেছে, এই বাড়ির সর্বশেষ জমিদার রাজেস্বর রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হন তাঁর বোন দেবী চৌধুরী। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর ছেলে বাবু চৌধুরী মালিক হন। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী ববিতা মুখার্জি এবং তিন ছেলে প্রীতম মুখার্জি, অপু মুখার্জি ও তপু মুখার্জি মালিকানা দাবি করেন। এ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে মামলাও চালানো হয়।

প্রীতম মুখার্জি জানান, বাড়িটি তাঁদের পূর্বপুরুষের। রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে মামলায় তাঁদের পক্ষে রায় হয়েছে। জরাজীর্ণ বাড়িটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করবেন। ভবনটি ভাঙার জন্য তাঁরাই শ্রমিক নিয়োগ করেছেন।

কলসকাঠী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ মুন্না বলেন, জমিদার রাজেস্বর রায় চৌধুরীর উত্তরাধিকার দাবি করে প্রীতম মুখার্জির পরিবার কলসকাঠী, পটুয়াখালী ও কুয়াকাটা এলাকায় মোট ৩৯৬ একর জমির মালিকানা দাবি করে আসছেন। তাঁরা মামলায় জিতেছেন কিনা তা কেউ জানে না। এলাকার ঐতিহ্য জমিদারবাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তিনি বিষয়টি ইউএনওকে জানান।

কলসকাঠী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. বাদশা বলেন, বাড়িটি ইতিহাসের সাক্ষী। বাড়িটি সংরক্ষণ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল বলেন, জমিদারবাড়ি ভাঙার খবর পেয়ে তিনি কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বাড়ির মালিকানা দাবিদারদের কাগজপত্র যাচাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×