ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ঈশ্বরদীতে গুলিতে রিকশাচালকের মৃত্যু

ক্ষমতাসীনদের কাছেও আতঙ্ক যুবলীগ নেতা আনোয়ার

ক্ষমতাসীনদের কাছেও আতঙ্ক যুবলীগ নেতা আনোয়ার

আনোয়ার উদ্দিন

সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী (পাবনা)

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ | ২১:২২

ঈশ্বরদীতে প্রকাশ্যে গুলি করে এক রিকশাচালককে হত্যায় জড়িত যুবলীগ নেতা আনোয়ার উদ্দিন এলাকার ক্ষমতাসীনদের কাছেও এক আতঙ্কের নাম। কথায় কথায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে মারধর করতেও দ্বিধা করেন না তিনি। এলাকার সাধারণ মানুষের কাছেও তিনি মূর্তিমান আতঙ্ক। কেউ তাঁর ভয়ে মুখ খুলতে চান না। রেলের তেল চুরি করে তিনি এখন কোটিপতি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি অস্ত্র, মাদক ও চোরাকারবারের সঙ্গেও জড়িত। আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয়রা এসব তথ্য দিয়েছেন। এর আগেও হত্যা মামলায় জেল খেটেছেন তিনি।

আনোয়ারের বড় ভাই কামাল উদ্দিন ঈশ্বরদী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। সেই দাপটেই এক সময়ের তালিকাভুক্ত রেলের তেল চোর আনোয়ারের এত দাপট যে তিনি কথায় কথায় পকেট থেকে পিস্তল বের করে যাকে-তাকে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দিতে দ্বিধাবোধ করেন না।

রেলের জমি দখল করে ব্যক্তিগত অফিসসহ একাধিক বাড়ির মালিক আনোয়ার এলাকায় সিন্ডিকেট তৈরি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। পাশাপাশি দলীয় একাধিক নেতার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, মারধর, জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, জুয়ার আসর বসানোসহ বহু অপকর্মে তিনি জড়িত।

আনোয়ার আগে বিএনপির রাজনীতি করতেন। তবে বড় ভাই কামাল যুবলীগের ওয়ার্ড সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তিনিও নিজেকে যুবলীগের নেতা হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন। রহিমপুর এলাকায় ২০১২ সালে মাসুদ রানা হত্যাকাণ্ডের ১ নম্বর আসামি হিসেবে জেল খেটে জামিনে আছেন তিনি। এর আগে তেল চুরি, ইয়াবাসহ মাদকের একাধিক মামলা, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, মারামারি, হামলার মামলায়ও কয়েকবার জেল খেটেছেন।

বছর তিনেক আগে ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদের বাড়িতে ভাঙচুর, সাদিপাড়ার আব্দুর রশিদকে মারধর করেন তিনি। এ ছাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আতাউর রহমানের ওপর হামলা এবং রহিমপুরের যুবলীগ নেতা মনিকে মারধরের ঘটনায়ও অভিযুক্ত এই সন্ত্রাসী।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, রেলের জায়গায় একাধিক অফিস তৈরি করে সেখানে রাতভর জুয়ার আসর বসিয়ে এলাকার পরিবেশ বিষিয়ে তুলেছেন আনোয়ার। এলাকার বহু মানুষ তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ। গত বুধবার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরের পশ্চিমটেংরির কড়ইতলা এলাকায় প্রকাশ্যে পিস্তলের গুলিতে মামুন নামের এক অটোরিকশাচালককে হত্যা করার পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী।

১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ জানান, আনোয়ার ছিলেন রেলওয়ের তালিকাভুক্ত তেল চোর। ঈশ্বরদী লোকোমোটিভ শেড থেকে তেল চুরিই ছিল তাঁর কাজ। তেল চুরির টাকায় কোটিপতি হওয়ার পর তাঁর বড় ভাই কামাল পৌরসভার কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি হন। এরপর থেকে আনোয়ার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বলেন, তাঁর ভাগনে রানাকে তুচ্ছ কথায় কুপিয়ে আহত করা ছাড়াও আনোয়ার তাঁর বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও গুলিবর্ষণ করে ত্রাস সৃষ্টি করেছেন। শহরের বড় ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান টিপু বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নাম করে কামাল ও আনোয়ার তাঁকে নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য করতেন।

ঈশ্বরদী পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম লিটন বলেন, আনোয়ার পৌর কিংবা ওয়ার্ড যুবলীগের কোনো কমিটির সদস্য নন। তবে তিনি নিজেকে যুবলীগের নেতা বলে পরিচয় দিয়ে থাকতে পারেন।

গত বুধবারের হত্যাকাণ্ডের পর আনোয়ার পলাতক। তাঁর ব্যবহূত মোবাইল ফোনও বন্ধ। তাঁর স্ত্রী বিচিত্রা পারভিন বলেন, তাঁর স্বামীকে ফাঁসাতে স্থানীয় প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। এসব ষড়যন্ত্র।

অভিযোগ উঠেছে, প্রকাশ্যে অনেক মানুষের সামনে গুলি করে রিকশাচালককে হত্যা করলেও পুলিশ এখনও তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁর অবস্থান চি?িহ্নত করে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন নিহত মামুনের পরিবারের সদস্যরা।

ঈশ্বরদী থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ ও মামলা করতে দেরি হয়েছে। তবে ঘটনার পরপরই আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযানে নেমেছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁর মোবাইল ট্র্যাক করে অবস্থান নিশ্চিত হলেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে।

ভাই-ছেলেকে গ্রেপ্তার দেখাল র‌্যাব :বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নিহত মামুনের মা লিপি আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় কামাল, আনোয়ারসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া তিন থেকে চারজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিও জড়িত বলে জানিয়েছে পরিবার। হত্যাকাণ্ডের পরপরই পুলিশ কামাল ও আনোয়ারের ছেলে হৃদয় হোসেনকে তুলে নিয়ে যায় বলে পরিবার সে সময় জানায়। পুলিশ তখন তা অস্বীকার করলেও গতকাল শুক্রবার তাঁদের গ্রেপ্তারের কথা জানায় র‌্যাব।

আরও পড়ুন

×