পাঁচ দিনেও উদ্ধার হয়নি পশুর চ্যানেলে ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজটি

ফাইল ছবি
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৬:৪৬ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৬:৪৬
মোংলা বন্দরের পশুর নদীর চ্যানেলে ডুবে যাওয়া সার বোঝাই লাইটার জাহাজটি আজ পাঁচ দিনেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ দিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠনসহ কার্গো মালিক পক্ষকে দ্রুত উদ্ধার তৎপরতার তাগিদ দিলেও তা বাস্তবায়নে ধীরগতি চলছে।
ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজের মালিক পক্ষ বলছে, জাহাজটি উদ্ধারে বন্দর কর্তৃপক্ষ যে ১৫ দিনের সময় বেধে দিয়েছেন সে সময়ের মধ্যে এটিকে পুরোপুরি উদ্ধার করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
অপরদিকে কার্গোটি মূল চ্যানেলে ডুবলেও এ চ্যানেল দিয়ে নৌ চলাচল স্বাভাবিক ও ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের হারবার বিভাগ।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১ টার দিকে একটি বিদেশি জাহাজ থেকে ৫০০ মেট্রিক টন সার নিয়ে ফেরার পথে ঘন কুয়াশার কারণে অপর একটি বিদেশি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় লাইটার জাহাজ এমভি শাহজালাল এক্সপ্রেস।
এ ঘটনায় সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এগ্রিকালচার কর্পোরেশনের (বিএডিসি), পরিবহন ঠিকাদার আকিজ গ্রুপ ও লাইটার জাহাজ মালিকপক্ষ দুর্ঘটনার পর পরই মোংলা থানায় পৃথক তিনটি সাধারণ ডায়রি করেছে। এতে ৫০০ মেট্রিক টন সারের কথা উল্লেখ থাকলেও টাকার অংকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানো হয়নি। এ দিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠনসহ জাহাজ মালিক পক্ষকে দ্রুত উদ্ধার তৎপরতার তাগিদ দিলেও তা বাস্তবায়নে ধীরগতি চলছে। অপরদিকে এ নৌ চ্যানেল দিয়ে পণ্যবাহী দেশি-বিদেশি জাহাজের আগমন-নির্গমন নিশ্চিত করতে দুর্ঘটনাস্থলে মার্কিং বয়া স্থাপন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর বন্দরের নৌ চ্যানেল নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে বলে বন্দরের হারবার বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ জানান, এ ঘটনার পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হয়। ইতোমধ্যে দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। এ প্রতিবেদন দু’ একদিনের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ আরও জানান, প্রাথমিক তদন্তে সার নিয়ে ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজ এমভি শাহজালাল এক্সপ্রেসের মাস্টার (চালক) ওবায়দুর রহমানের গাফেলতি পাওয়া গেছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন- ওই সময় ঘন কুয়াশা থাকায় মাস্টারের উচিৎ ছিল লাইটার জাহাজটি না চালিয়ে কোনো এক জায়গায় অবস্থান করা। কিন্তু মাস্টার সেটি না করে ভুল সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী হারবাড়িয়া-৯ এ অবস্থান করা ‘এমভি ভিটা অলিম্পিক’ নামে বিদেশি জাহাজ থেকে ৫০০ টন সার বোঝাই করে ছেড়ে আসে। এর পরে পথিমধ্যে হারবাড়িয়া-৮ এ অবস্থান করা অন্য আরেকটি বিদেশি জাহাজ ‘সুপ্রিম ভ্যলো’র টার্ন করার সময় ঘন কুয়াশায় দেখতে না পেয়ে সেটিতে ধাক্কা লাগায় শাহাজালাল এক্সপ্রেস লাইটারটি। ওই সময়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে লাইটারটি ডুবে যায়।
অপরদিকে ডুবে যাওয়া লাইটার শাহাজালাল এক্সপ্রেসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই শিপিং লাইন্সের মালিক আজাহার সিদ্দিক দাবি করেন, লাইটারটি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় মাস্টার ওবায়দুর রহমানের কোনো গাফিলতি ছিল না। সে একজন দক্ষ চালক। বন্দর কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার যে কারণ উল্লেখ করেছেন তার ব্যাখা দিয়ে আজাহার সিদ্দিক বলেন, কোনও বিদেশি জাহাজ থেকে পণ্য বোঝাই হওয়ার পর সেখানে এক মুহূর্ত থাকতে দেওয়া হয় না, কাজেই সেখান থেকে অন্যত্র অবস্থান নেওয়ার জন্য ঘন কুয়াশায়ও মাস্টারের লাইটারটি চালাতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের বেধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে এই লাইটার জাহাজটি ওঠানো সম্ভব না। অনেক সময় লাগবে। ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজ থেকে প্রাথমিকভাবে সার অপসারণ করতেও এখনও এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
- বিষয় :
- মোংলা বন্দর
- পশুর নদী
- লাইটার জাহাজ
- জাহাজডুবি