চট্টগ্রামে সরকারি কলেজে শিক্ষক সংকট তীব্র
দৈনিক মজুরি ৪০০ টাকা, কাজ নেই বেতনও নেই

প্রতীকী ছবি
তৌফিকুল ইসলাম বাবর, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ২২:৫৮
কলেজ শিক্ষকের বেতন দৈনিক ৪০০ টাকা। তাও আবার 'কাজ নেই তো বেতন নেই' ভিত্তিতে। অর্থাৎ কোনো কারণে কলেজে না গেলে এই টাকা পাওয়া যায় না। অন্য কোনো সুবিধাও নেই বললেই চলে। চট্টগ্রামের সেরা সরকারি কলেজগুলোতে 'অতিথি শিক্ষকদের' এমন নামমাত্র বেতন দেওয়া হচ্ছে।
নগরীতে সরকারি পর্যায়ে পাঁচ সেরা কলেজ হচ্ছে- চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, সিটি কলেজ, কমার্স কলেজ ও মহিলা কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী ৭০ হাজারের মতো, শিক্ষক সাড়ে ৪০০। এ হিসাবে ১৫৫ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক একজন। অথচ ২০ থেকে ২৫ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে শিক্ষক থাকার কথা। প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় কলেজগুলোকে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে চালাতে হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির সময় 'সেমিনার ফি' হিসেবে যে টাকা নেওয়া হয়, সেই টাকা থেকে এই শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। অনেক সময় কলেজের 'বিবিধ' ফান্ড থেকেও বেতন পরিশোধ করা হয়। এই পাঁচ কলেজে অতিথি শিক্ষক রয়েছেন ৫ থেকে ৩০ জন করে। শুধু এসব কলেজে নয়, অন্য সরকারি কলেজগুলোতেও রয়েছেন অতিথি শিক্ষক।
অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু থাকা চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে শিক্ষার্থী ১০ হাজারের মতো। কিন্তু শিক্ষক আছেন ৮৬ জন। অনেক কোর্সে পাঠ কার্যক্রম চালানোর মতো পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। কলেজটিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৩০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দু'জনের মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকা করে এবং অন্য ২৮ জনের বেতন দৈনিক ৪০০ টাকা করে। কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা আক্তার নুর সমকালকে বলেন, 'কলেজে একাদশ-দ্বাদশ, স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) স্নাতকোত্তর বিষয়ে পড়ানো হয়। শিক্ষক কম থাকায় নিয়মিত পাঠদান চালানো সম্ভব হয় না। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা অতিথি শিক্ষক নিয়োগ দেই। তাঁদের যে বেতন দেই, তা উল্লেখ করার মতো নয়। বিষয়টা আমাদের বিবেকে লাগলেও তেমন কিছু করার থাকে না।' নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে এক শিক্ষক সমকালকে বলেন, অনার্স-মাস্টার্স পাস করার পর যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পেয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে কাজ করছি। সবাই মনে করেন, নামকরা কলেজে শিক্ষকতা করি। কিন্তু তাতে যে বেতন পাই তা বলতে আত্মসম্মানে লাগে। এমন কষ্টের কথা জানিয়েছেন আরও কয়েক শিক্ষক।
চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে অতিথি শিক্ষক ১২ জন। তাঁদের বেতনও অন্য কলেজগুলোর মতোই জানিয়ে অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুদীপা দত্ত বলেন, 'কলেজের দিবা ও বৈকালিক শাখায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। মোট শিক্ষক ১১০ জন। এর মধ্যে ১২ জন অতিথি শিক্ষক। এর পরও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় না। আবার চাইলেও অতিথি শিক্ষকদের পর্যাপ্ত বেতন দিতে পারি না।'
চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজে অতিথি শিক্ষক ১৩ জন এবং সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে রয়েছেন ১১ জন। তাঁদের মান অনুযায়ী বেতন দিতে না পারার জন্য নিজের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ সুসেন কুমার বড়ূয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স পাস করা শিক্ষার্থীদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকি। কিন্তু তাঁদের ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি বেতন দেওয়া যায় না। তাই তাঁদের ধরে রাখা যায় না। একজন চলে গেলে আরেকজনকে নিয়োগ দিতে হয়। প্রতি মাসেই এমন ঘটনা ঘটছে।
একসময় চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে বেশ কয়েকজন অতিথির শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে রয়েছেন চার-পাঁচজন। অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোজাহেদুল ইসলাম বলেন, 'অতিথি শিক্ষকদের পর্যাপ্ত বেতন দিতে পারি না। তাই শিক্ষক সংকট হলেও আমরা সহজে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ দিই না। নিজেরাই বাড়তি চাপ নিয়ে কাজ করি।'
- বিষয় :
- চট্টগ্রাম
- কলেজ শিক্ষক
- শিক্ষকের বেতন
- কলেজ
- সরকারি কলেজ