ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কে দোকান

ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কে দোকান

নারায়ণগঞ্জের কালীরবাজার সড়কে দোকান বসিয়েছেন হকাররা - মেহেদী হাসান সজীব

শরীফ উদ্দিন সবুজ, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ | ২৩:২৪

চলতি রমজানের শুরুতে ঢাকঢোল পিটিয়ে নারায়ণগঞ্জ নগরীর যানজট নিরসনের ঘোষণা দেয় পুলিশ। সেজন্য ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করার কথাও জানায় তারা। তবে দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ফুটপাত তো দখলমুক্ত হয়ইনি, উল্টো নগরীর গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সড়কে কয়েক সারি করে দোকান বসিয়েছেন হকাররা। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত কাভার্ডভ্যান, যাত্রীবাহী বাসের কারণেও বাড়ছে যানজট। ঈদ সামনে রেখে নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে বাড়তি ভোগান্তি।

২০ মার্চ এ বিষয়ে নগরীর চাষাঢ়ায় এক ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল ফুটপাত হকারমুক্ত রাখা, নগরীর যানজট নিরসনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ জন্য পুলিশের উদ্যোগে ১০০ স্বেচ্ছাসেবককেও মাঠে নামানো হয়। শহরতলি থেকে আসা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে নগরীর আটটি পয়েন্টে বসানো হয় চেকপোস্ট। তবে এসব উদ্যোগকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নগরীর এক নম্বর রেলগেট থেকে কালীরবাজার, কালীরবাজার পোস্ট অফিস মোড় থেকে গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের মোড়, এক নম্বর রেলগেট থেকে দুই নম্বর রেলগেট পর্যন্ত সড়কে দুই-তিন সারি করে বসছে অস্থায়ী দোকান।

কালীরবাজারের পাশের মহল্লা আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক মেজবাহ উদ্দিন মিজু। প্রতিদিন ছেলে শুদ্ধকে নিয়ে যান পাঠানটুলীতে। সেখানকার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুলের ছাত্র সে। মেজবাহ উদ্দিন বলেন, কালীরবাজারের যানজটে তাঁকে প্রতিদিন দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়। রোজার সময় এমনিতেই কালীরবাজার মার্কেট, পাশের দ্বিগুবাবুর বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যায়। তার ওপর সড়কের প্রায় অর্ধেক দখল করে দুই-তিন সারি করে দোকান বসানো হয়েছে।

তাঁর ভাষ্য, কোনো কোনো ভবনের নিচে দোকান তৈরি করা হয়েছে, তবে ক্রেতার দাঁড়ানোর জায়গাটি সড়কে। ফলে এ দুটি সড়কে যানজট লেগেই থাকে। প্রায় সময় হেঁটে যাওয়ারও উপায় থাকে না। শুধু ফুটপাতেও হকার বসানো হলেও এতটা অসুবিধা হতো না বলে মনে করেন তিনি।

সম্প্রতি পুরোনো কোর্ট এলাকার ফ্রেন্ডস মার্কেটের সামনে কথা হয় শ্যামল সরকার ও শ্রাবণী শীল দম্পতির সঙ্গে। দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে শ্রুতিকে নিয়ে কেনাকাটায় এসেছিলেন তাঁরা।

শ্যামল সরকার বললেন, ‘নগরীর ফুটপাত দখলের প্রতিবাদ আমরা করতে শুনি। কিন্তু কালীরবাজার ও পুরোনো কোর্ট এলাকায় রাস্তা দখল করে প্রতিনিয়ত দোকান বসছে। এর কোনো প্রতিবাদ নেই। এসবের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে নগরীর যানজট কমানো যাবে না।’

এক নম্বর রেলগেট থেকে দুই নম্বর রেলগেট পর্যন্ত সড়কের (শহীদ সোহরাওয়ার্দী রোড) পরিস্থিতিও একই রকম। ওই সড়কের বাসিন্দা তারেক বাবু বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, নগরীর ব্যস্ততম পাইকারি বাজার দ্বিগুবাবুর বাজারের একটি মুখ এ সড়কে। এ ছাড়া বাসস্ট্যান্ডও এখানে। রেলস্টেশন, শীতলক্ষ্যার লঞ্চঘাটে, খেয়াঘাটে যেতেও এ পথ ব্যবহার করতে হয়।

ওই সড়কের ফুটপাতে প্যান্ডেল টানিয়ে হকাররা মার্কেট বানিয়ে ফেলেছে জানিয়ে তিনি বলেন,  ফুটপাত দখল করেই তাঁরা ক্ষান্ত নন, রাস্তারও একটা অংশ দখল করে রাখছে। হোটেল মালিকরাও ফুটপাত অবৈধ দখল করে ইফতারের দোকান দিয়েছেন। দুই নম্বর রেলগেটে রাস্তার ওপরে বাস রেখে যাত্রী তোলা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট রাস্তা তিনটির দুইটি পড়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে। এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, ‘মানবিক কারণে আমি হকারদের পক্ষে। হকার উচ্ছেদ নয়, আমি চাই হকার ব্যবস্থাপনা। কিন্তু এ দুটি স্থানে রাস্তা দখল করেই হকাররা দোকান বসাচ্ছেন, এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।’

তিনি বলেন, ‘অনেকবার রাস্তা থেকে হকার উচ্ছেদ করতে যাই। তখন ভ্যানগাড়িতে বসানো দোকান সরিয়ে নিলেও পরে আবার বসে পড়ে।’

কয়েকটি পক্ষকে চাঁদা দিয়ে দোকান বসানো হয় বলেও অভিযোগ করেন কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস। যে কারণে হকাররা বারবার এখানে দোকান বসানোর সাহস পান বলেও মনে করেন তিনি।

তাঁর কথার মতোই মন্তব্য করেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তিনি বলেন, রাস্তার ওপরে দোকান বসানো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন।  

পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। যানজট নিরসনে বিষয়টি নজরদারির ব্যবস্থা করছি।’

আরও পড়ুন

×