ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

সাঁওতালদের পাশে কেউ নেই

সাঁওতালদের পাশে কেউ নেই

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২০ | ০৯:৪৩

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। তবে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসহায় এসব মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌছেঁ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি রাতে ঘুম থেকে তুলেও খাদ্যসামগ্রী বিতরণের খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালপল্লির বাসিন্দারা। সাহায্য তো দূরের কথা, এখন পর্যন্ত পল্লির সহস্রাধিক সাঁওতাল পরিবারের দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি। অবশ্য বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণেই শুধু নয়, ভূমি থেকে বিতাড়নের পর থেকেই সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম সাঁওতালপল্লির বাসিন্দারা কর্মহীন।

পিরিনা হেমব্রমের বয়স ৭০। স্বামী নুইছ সরেন প্রায় ৮০ বছর বয়সে শয্যাশায়ী। ছেলেমেয়ে নেই। পিরিনা হেমব্রমের আয়ের ওপরে চলে সংসার। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে শাক-সবজি এবং নদী ও খাল-বিলে গিয়ে শামুক-কাঁকড়া সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে সংসার চালান। মাইবেটি হাজদার বয়স ৬৫। স্বামী সম হেমব্রমের বয়স প্রায় ৭৫ বছর। তাদের সংসারে দুই মেয়ে। দু'জনেরই বিয়ে দিয়েছেন। স্বামী কর্মক্ষম। তার আয়ের ওপর সংসার নির্ভরশীল। তিনিও বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে শামুক-কাঁকড়া সংগ্রহ করে তা বিক্রি করেন। মাইবেটি জানান, আগে বিভিন্ন সংস্থা তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করত। এখন কেউ আসে না।

গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালপল্লির সহস্রাধিক পরিবারের দিনলিপি এমন। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমজীবী নারীরা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। মাঠে কাজ না থাকায় তাদের আর কদর নেই। জমানো টাকা দিয়ে কিছুদিন সংসার চললেও টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ সময়েই অনাহারে থাকতে হচ্ছে। কয়েকদিন আগে কালবৈশাখীর ছোবলে অনেকের ঘরবাড়ি উড়ে যাওয়ায় খুপড়ি তুলে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সব মিলিয়ে তাদের এখন দুর্বিষহ অবস্থা।

আদিবাসী নেত্রী রুমিলা কিসকু জানান, কোনো কাজ না থাকায় সাঁওতালপল্লির লোকজনকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাদের কোনো অনুদান দেন না। এমপির কাছ থেকেও কোনো সহযোগিতা নেই। সরকারের সব সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত।

রুপামনি টুডু নামের এক সাঁওতাল নারী বলেন, আমার নামটি লিখেন। তিনি ভেবেছিলেন হয়তো কোনো সংস্থা তাদের সাহায্য দেবেন। তাই তিনি তার নামটি তালিকায় লিখতে বলেন। ওই এলাকায় নতুন কোনো লোকজন গেলেই তারা ভেবে থাকেন কেউ তাদের সাহায্য দিতে এসেছে।

সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাস্কে বলেন, বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে তারা এখন ভূমিহীন। হাতে কাজ নেই, পেটে ভাত নেই। নিদারুণ কষ্টে কাটছে সাঁওতালদের জীবন।

এ ব্যাপারে সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুল বলেন, সরকারি বরাদ্দ না থাকায় তাদের কোনো সহযোগিতা করতে পারছি না। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মন বলেন, সরকারি বরাদ্দ এসেছে। কিন্তু ১৭টি ইউনিয়নের চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ অনেক কম। পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেলে সেখানেও আমরা অনুদান পৌঁছে দেব।

এ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, যারা দিন আনে দিন খায় তাদের জন্য সরকারিভাবে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সাহায্য-সহযোগিতা করা হচ্ছে। যাদের কর্ম নেই তাদের কর্মের ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালপল্লির বিষয়ে আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে।

আরও পড়ুন

×