আইসিডিডিআরবির গবেষণা
খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় বস্তির অর্ধেক পরিবার

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫ | ২১:৫৫
বস্তিতে বাস করা অর্ধেক পরিবার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটায়। প্রায় ৫০ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির। ৮০ শতাংশ প্রসূতি ক্যালসিয়াম স্বল্পতায় ভোগে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) রাজধানীর বাউনিয়াবাদ বস্তিবাসীদের পুষ্টি পরিস্থিতি নিয়ে করা এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার সকালে আইসিডিডিআরবির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, ঢাকা শহরে প্রায় পাঁচ হাজার বস্তি আছে। এসব বস্তিতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বাস। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করেন ৫০ হাজার মানুষ। ৮০ শতাংশ পরিবার এক কক্ষের ঘরে থাকে। ৯০ শতাংশ পরিবার টয়লেট ও সরবরাহ করা পানি ভাগাভাগি করে। ৯১ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে ঋণগ্রস্ত।
প্রধান গবেষক মোস্তফা মাহফুজ বলেন, বস্তির প্রসূতি নারীরা প্রয়োজনের চেয়ে ৩১৪ শতাংশ বেশি শর্করা খান। গর্ভবতীদের ৮০ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ৭৮ শতাংশ ভিটামিন এ, ৫৮ শতাংশ লৌহ এবং ৪৪ শতাংশ জিংক স্বল্পতায় ভুগছেন। অন্যদিকে শিশুদের ৫৯ শতাংশ রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। শিশুদের ২৭ শতাংশের উচ্চতা ও ২০ শতাংশের ওজন কম।
অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ও পুষ্টিবিদ তাহমিদ আহমেদ বলেন, দেশে অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। শহরের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করে। স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের মাঝখানে থাকা বস্তিবাসী নানা সেবা থেকে বঞ্চিত। বস্তির মানুষের জীবনমান খারাপ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২১ সালের নভেম্বরে গবেষণা শুরু করেন গবেষকরা। এখানে ১৬ হাজার ৫৩২টি পরিবারে ৬০ হাজার ৭৮৬ মানুষ থাকে। গবেষণায় ৭২১ জন প্রসূতি নারী, ৪ হাজার ২৩৪ কিশোরী এবং দুই বছরের কম বয়সী ২ হাজার ৪৯৭ শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
নিউট্রি-ক্যাপ নামে এ গবেষণাকাজ শেষ হয়েছে এ বছরের মে মাসে। কানাডা সরকারের আর্থিক সহায়তায় অ্যাডভান্সিং সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ হেলথ অ্যান্ড রাইটস (অ্যাডসার্চ) প্রকল্পের আওতায় আইসিডিডিআরবির পুষ্টি গবেষণা বিভাগ কয়েকটি গবেষণা করছে। নিউট্রি-ক্যাপ এর একটি।
আইসিডিডিআরবির গবেষকরা এই বস্তির প্রসূতি নারী, কিশোরী ও দুই বছরের কম বয়সী শিশু- এই তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে একীভূত সেবা প্যাকেজ চালু করে। এই প্যাকেজের আওতায় পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন এ দেওয়া হতো। এ ছাড়া ওজন, রক্তচাপ, রক্তে হিমোগ্লোবিন ও শর্করা নিয়মিত মাপা হতো। এর পাশাপাশি বস্তিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ ও প্রচারণা চালানো হয়।
অনুষ্ঠানে মোস্তফা মাহফুজ বলেন, গবেষণার আওতাধীন প্রসূতি নারীদের ওজন বেড়েছে, হাসপাতালে প্রসবের হার বেড়েছে। পাশাপাশি গর্ভপাত ও নবজাতকের মৃত্যু কমতে দেখা গেছে। কিশোরীদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়তে দেখা গেছে। অন্যদিকে শিশুদের উচ্চতা ও ওজন বেড়েছে।
স্বাগত বক্তব্যে আইসিডিডিআরবির পুষ্টি বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক থাডিয়াস ডেভিড মে বলেন, পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতিতে দরকার সমন্বিত উদ্যোগ। এ গবেষণা প্রকল্পে মানুষকে তথ্য ও পরামর্শের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানও দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় কানাডা দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি এডোয়ার্ড ক্যাবরেরা বলেন, এমন একটি গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পেরে আনন্দিত। আইসিডিডিআরবি কোনো গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করলে তা থেকে বিশ্ববাসীর কিছু গ্রহণ করার থাকে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক ও আইসিডিডিআরবির প্রফেসর ইমিরেটাস শামস এল আরিফিন বলেন, অপুষ্টি দূর করার ক্ষেত্রে গবেষণাটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এর সম্প্রসারণ নিয়ে কাজ হতে পারে।
- বিষয় :
- ঢাকা
- বস্তি
- গবেষণা
- আইসিডিডিআর
- বি