ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

কৃষিতে বিপ্লব আনবে নতুন জাত ব্রি-১০২

কৃষিতে বিপ্লব আনবে নতুন জাত ব্রি-১০২

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২০ মে ২০২৩ | ০৪:১৩

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ব্রি-১০২ জাতের নতুন ধান আশা জাগাচ্ছে গবেষকদের। পুষ্টিসমৃদ্ধ এ ধান উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষিতে বিপ্লব ঘটাবে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এরই মধ্যে গোপালগঞ্জে ধানটির পরীক্ষামূলক চাষে মিলেছে সাফল্য। প্রতি শতাংশে ১ মণ ফলন হয়েছে।

গোপালগঞ্জের ৫টি প্রদর্শনী প্লটে এই জাতের ধান হেক্টরে ৮ দশমিক ১০ থেকে ৯ দশমিক ৫ টন পর্যন্ত ফলন হয়েছে। সেই হিসাবে শতাংশে ফলন হয়েছে প্রায় ১ মণ বা তারও বেশি। ব্রি-২৯ এর বিকল্প হিসেবে এ ধানের আবাদ করা যায়। নতুন এই জাতের ধানে রোগবালাই নেই। লম্বা, চিকন প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এই ধানের ভাত ঝরঝরে এবং খেতে সুস্বাদু। স্বল্প খরচে ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হয়েছেন।

 ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, ২০২২ সালে এই বীজ ধান ছাড় করে বীজ বোর্ড। এ বছর বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জের ৫টি প্রদর্শনী প্লটে প্রথমবারের মতো ধানটির আবাদ করেন কৃষক। চিকন ধানের জাতের মধ্যে এই জাতই সর্বোচ্চ ফলন দিয়েছে। চিকন ধানে এটি নতুন আশা জাগিয়েছে। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান বাজারে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের কৃষি ও কৃষকের জন্য সুসংবাদ। এই জাতের ধান এসডিজি অর্জনে সহায়তা করবে। এই ধানের চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ ধানে আরও সমৃদ্ধ হবে। কৃষকের আয়ও বাড়িয়ে দেবে।’

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত একটি ক্লাইমেট স্মার্ট জাত ব্রি-১০২। বোরো মৌসুমের এ ধান জিঙ্কসমৃদ্ধ। কারণ মাছে-ভাতে বাঙালি, ধানেই সমৃদ্ধি। ব্রি-১০২ ধান দেশের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।’ এমন প্রত্যাশার কথা বলছিলেন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৃজন চন্দ্র দাস।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক মুহিব শেখ (৫০)। তিনি প্রদর্শনীর প্লট এক একরে ব্রি-১০২ জাতের ধান আবাদ করেছেন এ বছর। তাঁর জমিতে প্রায় চার টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার প্লটে সবচেয়ে বেশি ফলন দিয়েছে। আমি জীবনে চিকন ধানের এত বেশি ফলন দেখিনি। এই ধানে রোগবালাই নেই বললেই চলে। কৃষকসহ সবাইকে মুগ্ধ করেছে এ ধান।’

মুহিব শেখ বলেন, অনেক কৃষকই এই ধান দেখে চাষাবাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ ধান লম্বা ও চিকন। তাই বাজারে মোটা ধানের তুলনায় প্রতি মণ ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি পাওয়া যাবে। কৃষকের জন্য এই ধান নতুন দিশা হয়ে এসেছে।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, প্রতিবছর দেশের জনসংখ্যার সঙ্গে ২০-২২ লাখ মানুষ যোগ হচ্ছে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে খাবারের নিশ্চয়তা দিতে হলে অবশ্যই ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাতের উফশী ধানগুলোর চাষ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কেননা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলোর ফলন আগের ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ এর চেয়ে অনেক বেশি। এগুলো যদি ভালো পরিচর্যা করা যায়, তাহলে আরও বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল কাদের সরদার বলেন, ‘ব্রি উদ্ভাবিত জিঙ্কসমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ ও ব্রি-১০২ জাতের ধানের চাষাবাদ আমরা সম্প্রসারণ করব। এতে একদিকে যেমন কৃষক অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হবেন, তেমনি দেশের সাধারণ মানুষের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করবে। এ ধান উদ্ভাবনে সরকারের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।’

আরও পড়ুন

×