ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

পায়রা বন্দরের উচ্ছেদ হওয়া রাখাইনদের পুনর্বাসনের দাবি

পায়রা বন্দরের উচ্ছেদ হওয়া রাখাইনদের পুনর্বাসনের দাবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩ | ১৪:৫২ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ | ১৪:৫৯

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় নির্মাণাধীন পায়রা বন্দরের কারণে উচ্ছেদ হওয়া ছ আনী পাড়ার রাখাইনদের সম্মানজনক পুনর্বাসন ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। শনিবার বিকেলে কলাপাড়া উপজেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তারা এসব দাবি জানান। 'নাগরিক প্রতিনিধি দল'র ব্যানারে এর আয়োজন করা হয়। 

সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই রাখাইনদের পুনর্বাসনের কথা দেওয়া হলেও তাদের পুনর্বাসন করা হয়নি। কাপ্তাই বিদ্যুৎ প্রকল্পের সময় স্থানীয় আদীবাসীদের সঙ্গে পাকিস্তান সরকার যা করেছিল, এখানেও তাই হচ্ছে। তাই এসব আদীবাসীদের যথাযথ সম্মানজনক পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, বরগুনা ও পটুয়াখালী এলাকায় অনেক আগে থেকেই রাখাইন জনগোষ্ঠীর বাস ছিল। কিন্তু এই সংখ্যা এখন পাঁচ হাজারেরও কম। অবস্থা এমন যে, তারা এখন শুধু সংখ্যালঘুই নন, তারা বিলুপ্তির পর্যায়ে। একইসঙ্গে নানা ধরনের মামলা, হামলা, দখলদারিত্বের কারণে তাদের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। পায়রা বন্দরের কারণে উচ্ছেদের কারণে ছ আনী পাড়ার রাখাইনদের সম্মানজনক পুনর্বাসন ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দরকার ছিল। কিন্তু তাদের তেমন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, এই সম্প্রদায়কে ভূমিহীনদের মতো অন্যান্যদের সঙ্গে পুনর্বাসন করার পায়তারা চলছে। কিন্তু তারা তো ভূমিহীন নন। তাদের বাড়িঘর ছিল, উঠান ছিল। তাহলে তাদেরকে কেন ভূমিহীনদের মতো পুনর্বাসন করা হবে।কিন্তু একটি রাখাইন পরিবারের সঙ্গে একটি বাঙালি পরিবারের সাংস্কৃতিক পার্থক্য রয়েছে। বাঙালি পরিবারের সঙ্গে তারা থাকলে তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। এজন্য তাদের সম্মানজনক পুনর্বাসন জরুরি।

জাকির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, নাগরিক উদ্যোগ- আজ সংবিধানকে না মেনে সংখ্যালঘুদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এটা অমানবিক। তাদের নিজস্ব ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে, দরিদ্রদের মতো পুনর্বাসন করা হচ্ছে। শুধু পটুয়াখালীই নয়, বরং সারাদেশেই এটা চলছে।  এই ছয় পরিবারের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চর্চা আলাদা। তাদের অবশ্যই পুনর্বাসন করতে হবে। তাদের যেখানে পুনর্বাসন করা হবে, সেখানে শশ্মান, উপাসনালয় ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা প্রয়োজন।

উচ্ছেদের শিকার চিংদামো রাখাইন (দামো)- পায়রা বন্দর সনিকটে ছ আনীপাড়া নামে ২৫০ বছরের পুরাতন একটি রাখাইন পল্লী ছিল। যেখানে আমারা ছয়টি রাখাইন পরিবার বসবাস করছি। পায়রা বন্দর নির্মানের জন্য বাংলাদেশ সরকার পক্ষ থেকে ভূমি অধিগ্রহণের ফলে বর্তমানে আমাদের বসবাসরত পল্লীটি বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করতে হয়। শর্ত অনুযায়ী, আমাদের পুনর্বাসন না করা পর্যন্ত আমাদের বাসা ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু প্রথম ছয় মাস ভাড়া দেওয়া হলেও এখন তা দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি বন্দরের পক্ষ থেকে বাঙালিদের সঙ্গে আমাদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা কোনো আবাসনে যেতে অনিচ্ছুক কারণ আমাদের, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পোশাক, পরিচ্ছদ, খাদ্যভ্যাস ও কৃষ্টিকালচার মূল ধারা জনগোষ্ঠির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের রাখাইনদের কিছু সামাজিক রীতিনীতি থাকে যা অলঙ্ঘনীয়। যেমন- প্রত্যেক রাখাইন পল্লীতে দৃটি শ্মশান থাকে যা শুধুমাত্র ওই পল্লীবাসীর জন্য সংরক্ষিত, যারা রাখাইন পল্লীর সীমানার মধ্যে মারাযান তাদেরকে মূল শ্মশানে এবং যারা রাখাইন পল্লীর সীমানার বাহিরে মারা যান তাদেরকে অতিথি শ্মশানে সমাহিত করা হয়। তাছাড়া আমাদের প্রত্যেক রাখাইন পল্লীর নিজস্ব বৌদ্ধবিহার, রিজার্ভ মজা পুকুর এবং একটি পবিত্রবৃক্ষ থাকা আবশ্যক। আমাদের যেখানে পুনর্বাসন করা হবে, সেখানে আমাদের প্রয়োজনীয় সব বিষয় থাকতে হবে। 

আরও পড়ুন

×