রাসিক নির্বাচন
জনগণই এখন কাউন্সিলর সাগরিকার পরিবার

সুলতানা আহমেদ সাগরিকা
নুরুজ্জামান খান, রাজশাহী
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩ | ১৮:০০
রাসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের সাগরিকা। বুধবার ভোটগ্রহণ শেষে রাতে তাঁকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন। ফল ঘোষণার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তবে মোবাইল ফোনে উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছেন। ৬ হাজার ২৬৩ ভোট পেয়ে ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন সাগরিকা।
এ জনপ্রতিনিধি বলেন, নির্বাচিত হওয়ায় এখন জনগণের সেবা করতে পারবেন। কেননা তাঁর কোনো পিছুটান নেই। পরিবার নেই, সংসার নেই। জনগণই তাঁর পরিবার ও সংসার। জনগণ যখনই প্রয়োজন মনে করবে, তখনই তিনি সেবা দিতে পারবেন। এলাকার অবহেলিত মানুষের জন্য কিছু করতে চান তিনি।
সাগরিকার ভাষ্য, তাঁর ভাই-বোনকে পরিবার সবসময় আগলে রাখত। কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রে পরিবার ও সমাজের আচরণ ছিল উল্টো। তৃতীয় লিঙ্গের বা হিজড়া হওয়ায় অবহেলার চোখে দেখত, অপদস্থ হতে হতো। শিক্ষা ও ভালো খাবার পাননি। তাঁর মা, ভাইবোনকে কটূক্তি করতো। ফলে পরিবার এক সময় বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় জোর করে রেখে আসে হিজড়া দলে।
সাগরিকা বলেন, জন্মের পর থেকেই তাঁকে মনে করা হতো পরিবারের অভিশাপ। সমাজের মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিত না। স্কুলের শিক্ষক, সহপাঠীরাও তাঁকে গ্রহণ করেনি। কেউ পাশে বসতে চাইত না। অনেকে বইখাতা ছিঁড়ে ফেলত। জামাকাপড় ছিঁড়ে দিত। শিক্ষকরা বলত, নাচ-গান গা।
পেশায় মৌসুমি ব্যবসায়ী সাগরিকা। থাকেন নগরীর সিরোইল এলাকায়। ব্যবসার আয়ে চলে জীবিকা। ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ নামের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তিনি। সাগরিকা জানান, হিজড়া সর্দারের কাছে রেখে আসার পর পরিবারের লোকজন খোঁজ নিত না। প্রথমে কষ্ট লাগলেও অন্য হিজড়াদের আচরণ তাঁদেরকে আপন করে নিতে শেখায়। তাঁরা বোঝান, এ জীবন গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প নেই।
প্রথম দিকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেন সাগরিকা। দোকানে টাকা চাইলে কেউ দিত, আবার অনেকে বকা দিত। তখন এত দোকানও ছিল না। তবে কয়েকজনের দোকানে গেলে খাওয়ার টাকা দিত তাঁকে। ২০০২ সালে একটি এনজিওতে মাঠকর্মীর চাকরি পান। ২০০৫ সালে চালু করেন দিনের আলো হিজড়া সংঘ।
গত ২ জুন সমকালে ‘জনগণের সেবক হতে চান তৃতীয় লিঙ্গের সাগরিকা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সাগরিকা বলেন, ‘আমার স্বপ্নপূরণ হয়েছে। এখন জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। ওয়ার্ডের মানুষ আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছে, জনপ্রতিনিধি বানিয়েছে। তাঁদের এই ঋণ শোধ করতে পারব না। নির্বাচনের আগে থেকেই সবাই আশ্বাস দিচ্ছিল। তাঁরা হতাশ করেননি।’