ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে

২২ দিন ধরে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জে নেই বিদ্যুতের আলো

২২ দিন ধরে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জে নেই বিদ্যুতের আলো

বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় রাতের বেলা ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ রীতিমতো ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয় - সমকাল

সাইফুল ইসলাম শাকিল, ভাঙ্গা

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৩ | ১৬:৩৭ | আপডেট: ২৮ জুন ২০২৩ | ১৬:৪০

বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকা-ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকাটি ২২ দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, কয়েকদিনে একাধিকবার বিদ্যুতের তার ও মিটার চুরি হওয়ায় বর্তমানে ইন্টারচেঞ্জ এরিয়ার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে ভাঙ্গা ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ বলছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (মুন্সীগঞ্জ) কাছে বিদ্যুৎ বিলের প্রায় ৩০ লাখ টাকা বকেয়া। আর বিল পরিশোধ না করায় এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকাটি দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন এরিয়া হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিন বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় রাতের বেলা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অন্যতম প্রবেশদ্বারটি রীতিমতো ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকায় প্রায় প্রতিনিয়ত চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাসহ এই এলাকায় দিয়ে যাতায়াত করা লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ভাঙ্গার কোর্ট পাড়ের বাসিন্দা শহিদুল মাতুব্বর (৫২) জানায়, এক মাস ধরে কোনো বিদ্যুতের লাইট, রোড লাইট জ্বলছে না। কী কারণে জ্বলছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি, গোল চত্বরের বিদ্যুতের তার চুরি হয়ে গেছে।

ইলিশ পরিবহনের শ্রমিক লিটু ব্যাপারী জানান, বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগে কয়েকদিন আগে এশার নামাজের পর ভাঙ্গা মডেল মসজিদসংলগ্ন বাইপাস রোডে থাকা ইলিশ পরিবহনের একটি গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটেছে।

ভাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৬ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইন্টারচেঞ্জ এলাকার চাঁদনী সিনেমা হলের সামনে অপরিচিত কয়েকজন যুবককে স্থানীয়রা ছিনতাইকারী সন্দেহে ধাওয়া দেয়। এ সময় এক যুবককে কুপিয়ে জখম আহত করে ছিনতাইকারীরা।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা-ফরিদপুর মহাসড়কের ফ্লাইওভারের নিচে লোকাল বাস কাউন্টারে কথা হয় বরিশালগামী যাত্রী ফেরদৌস, নুপুর, মুন্নু শেখসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, ঢাকা থেকে লোকাল বাসে পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙ্গায় আসছিলেন তারা। তাদের ভাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে নামানোর কথা ছিল। কিন্তু বাসটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাদের বগাইল টোলপ্লাজা থেকে ইন্টারশেকসন এরিয়ার কাছাকাছি নামিয়ে দেয়। সেখানে পুরো এলাকাটি অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। এতে তারা পথ হারিয়ে ফেলেন। পুরো এলাকাটি অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ায় গোল চত্বরের লেন ভুলে গিয়ে তারা প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে ভাঙ্গা দক্ষিণ পাড় বাস স্ট্যান্ড এসে পৌঁছেছেন।

তারা আরও জানান, পথিমধ্যে তাদের সঙ্গে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটলেও তারা বেশ ভয়ে ভয়ে বাস স্ট্যান্ড  এসে পৌঁছেছেন।

কোর্ট পাড়ের বাসিন্দা ঝালমুড়ি বিক্রেতা শরীফ শেখ জানান, সন্ধ্যার পর পুরো এলাকাটি অন্ধকার থাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের শঙ্কা বেড়েছে। তাই মানুষের সমাগম কমেছে। গত কয়েক দিনে এ এলাকায় সন্ধ্যার পর স্থানীয়রা ও দূর থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনাও কমেছে। এতে তার বেচাকেনাও কমে গেছে।

ভ্যানচালক মজনু শেখ জানান, গোল চত্বর এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় আশপাশের বসতবাড়িতেও চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি তার গোয়াল ঘর থেকে দুটি গরু চুরি হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

পুলিশ সন্ধ্যার পর টহল দিলেও চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা কমেনি বলে জানান স্থানীয়রা। তাই অনতিবিলম্বে ইন্টারচেঞ্জ এলাকায় বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান এবং মানুষের জান-মালের  নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।

সড়ক ও জনপথের (শ্রীনগর-মুন্সীগঞ্জ) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ইন্টারচেঞ্জ এলাকার বিদ্যুতের মিটার চুরি হয়ে যাওয়ায় কিছুদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই।

কিছু বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিল পরিশোধের জন্য বর্তমানে তাদের হাতে কোনো ফান্ড নেই।

ভাঙ্গা ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলী সাইদুর রহমান সমকালকে জানান, প্রায় ৩০ লাখ টাকা বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য একাধিকবার জানানো হয়েছে। এরপরও সংশ্লিষ্ট দপ্তর সময়মতো বিল পরিশোধ না করায় গত ৬ জুন ইন্টারচেঞ্জ এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) (ভাঙ্গা) মাসুদুর রহমান জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন মাঠে কাজ করছে।

/এমএইচটি/

আরও পড়ুন

×