ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ভালো নেই ৯ পাটকলের অর্ধলাখ শ্রমিক পরিবার

ভালো নেই ৯ পাটকলের অর্ধলাখ শ্রমিক পরিবার

মামুন রেজা, খুলনা

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলে দুই যুগ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন আব্দুল জলিল। ২০২০ সালের ২ জুলাই সরকার মিল বন্ধ করে দিলে তিনি বেকার হয়ে যান। এখন মিলের সামনে চায়ের দোকান দিয়ে কোনোমতে চলে তাঁর সংসার। মিল বন্ধের পর নগদ ৬ লাখ টাকা পেলেও বাকি ৬ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়ার কথা ছিল তাঁকে। কিন্তু তিন বছরেও তা পাননি। মিলের কোয়ার্টার ছেড়ে এখন থাকেন ২ নম্বর গেটের পাশে ভাড়া বাড়িতে।

আব্দুল জলিল বলেন, মিল কর্তৃপক্ষ বলছে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মিলের গেট পাসে নামের বানানে হেরফের থাকায় সঞ্চয়পত্র দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তাতেও কাজ হচ্ছে না। স্ত্রী, ৯ ও আড়াই বছরের দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অর্থাভাবে বড় ছেলের কিডনি রোগের চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

একই মিলের শ্রমিক মোহাম্মদ আলী ৮ লাখ ৩২ হাজার টাকা পেলেও সমপরিমাণ টাকার সঞ্চয়পত্র এখনও পাননি। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, নাতি নাতনিসহ ছয় সদস্যের পরিবারের খরচ মেটাতে দিশাহারা তিনি। হাউজিং বাজার এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকলেও নিয়মিত ভাড়া দিতে পারছেন না। অপেক্ষায় আছেন কবে আবার মিল চালু হবে।

শুধু এ দুজনই নন, তাঁদের মতো খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের চাকরিহারা প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক পরিবার কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। লোকসানের কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালের ২ জুলাই রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম, যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল বন্ধ করে দেয় সরকার। লিজের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করে তিন মাসের মধ্যে মিলগুলো আবার চালুর ঘোষণা দিয়েছিল বিজেএমসি। কিন্তু এখনও চালু হয়নি।

শ্রমিকরা জানান, তাঁদের কেউ কেউ অন্য পেশায় ঢুকলেও অনেকেই বেকার। খালিশপুর, দিঘলিয়া ও আটরা শিল্প এলাকার পাটকল বন্ধ হওয়ায় ওই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে নিজ জেলায় সপরিবারে ফিরে গেছেন। বন্ধ হয়ে গেছে মিল কারখানাকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও দোকানপাট। নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে শিল্প এলাকা।

ক্রিসেন্ট জুট মিল সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, খালিশপুর ও আটরা শিল্প এলাকা এখন মৃত শিল্প এলাকায় পরিণত হয়েছে। কর্মহীন দিন কাটছে হাজারও শ্রমিকের।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, সব শ্রমিক এখনও তাঁদের বকেয়া টাকা পাননি। অনেকের নতুন কর্মসংস্থানও হয়নি। ফলে তাঁরা ভালো নেই। আবার মিল চালুর প্রতিশ্রুতি থাকলেও অগ্রগতি নেই। বিআইডিসি সড়ক দেখিয়ে তিনি বলেন, এ সড়কের আলমনগর মোড় থেকে নতুন রাস্তা মোড় পর্যন্ত অর্ধেক দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। দোকানপাট ও কাঁচাবাজারে ক্রেতা কমে গেছে।

বিজেএমসি সূত্র জানায়, মিলগুলোর কাছে ২১৪ শ্রমিকের নগদ ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং ১ হাজার ৩১৫ শ্রমিকের ৭৭ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র পাওনা রয়েছে।

এ ব্যাপারে বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী গোলাম রব্বানী সমকালকে বলেন, মাসখানেক আগে যশোরের জেজেআই জুট মিল আকিজ গ্রুপকে লিজ দেওয়া হয়েছে। তারা শিগগিরই মিলটি চালুর চেষ্টা করছে। খুলনার প্লাটিনাম জুট মিল ফরচুন গ্রুপকে লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অন্য ছয়টি পাটকল লিজ দেওয়ার জন্য জুনের মাঝামাঝি তৃতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আর আলিম জুট মিলের মালিকানা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব থাকায় এটি লিজ দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। তিনি বলেন, অধিকাংশ শ্রমিকের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কিছু সংখ্যক শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা, নামের ভুলসহ বিভিন্ন প্রকার জটিলতা থাকায় তাঁরা এখনও সব টাকা পাননি। সেগুলোও পর্যায়ক্রমে পরিশোধের চেষ্টা চলছে।

এদিকে মিল বন্ধ থাকায় অযত্নে নষ্ট হচ্ছে ৯টি পাটকলের ৫ হাজার ৮৩টি তাঁত ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি। ফলে আবার এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে মিলগুলো উৎপাদনে যেতে পারবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। গোলাম রব্বানী বলেন, যন্ত্রপাতিগুলো মাঝেমধ্যে মেইনটেন্যান্স ও চালু করে দেখা হচ্ছে। কিন্তু যেভাবে মেইনটেন্যান্স করা দরকার, তা অর্থাভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না।

আরও পড়ুন

×