চেয়ারম্যান হত্যা মামলায় এমপিকে আসামি করতে চেয়ে আবেদন
-samakal-64a4686e70dc8.jpg)
শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশিদ খান। ছবি: সংগৃহীত
শিবপুর (নরসিংদী) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৩ | ১৮:৪৩ | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৩ | ০৪:০৬
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশিদ খান হত্যার ঘটনায় করা মামলায় স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ২০ জনের নাম অন্তর্ভূক্তির আবেদন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) প্রয়াত চেয়ারম্যানের ছেলে ও মামলার বাদী আমিনুর রশিদ খান তাপস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্সের উপপুলিশ কমিশনার, গোয়েন্দা, সিআইডি, পিবিআইসহ বিভিন্ন দপ্তরে এই আবেদন করেন।
আবেদনে স্থানীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহন (৬৭), আসাদুজ্জামান (৫৩), জুনায়েদুল হক ভূইয়া (৫৩), ফরহাদ আলম ভূইয়া (৬৪), দেলোয়ার হোসেন ভূইয়া (৫০), সৈয়দ মাসুদ পারভেজ (৪৮), ফারুক খান (৪৬), সিরাজ মিয়া, বাদল মিয়া (৫৫), আশরাফুল ইসলাম রিপন (৪৫), সুমন (৩৭), আমান উল্লাহ ভূইয়া, রাকিবুল ইসলাম ইরফান, কাউছার মিয়া (২৩), শাহাদত হোসেন (৩৯), সেলিম (৩৭), সজিব মোল্লা (৩২), আরমান পাশা (৪২), শাওন খান (২৩) ও বাবুল মিয়াকে (৫৩) এই হত্যা মামলায় আসামি করার অনুরোধ করা হয়।
আবেদনে জানানো হয়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ৬টার দিকে শিবপুর পৌর এলাকার বাজার সড়কে নিজের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ খান। ঘটনার পর তাঁকে প্রথমে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর পিঠে বিদ্ধ দুটি গুলি বের করা হয়।হামলার ঘটনার দুদিন পর উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে মো. আমিনুর রশীদ খান তাপস বাদী হয়ে পুটিয়া এলাকার আরিফ সরকারকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের নাম উল্লেখসহ ও অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেন।
আসামিরা হলেন- পুটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকার আরিফ সরকার (৪০), পূর্ব সৈয়দনগর এলাকার মো. মহসীন মিয়া (৪২), কামারগাও এলাকার ইরান মোল্লা (৩০), মুনসেফেরচর এলাকার শাকিল (৩৫), কামারগাও এলাকার হুমায়ুন (৩২) ও নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার গাড়িচালক নূর মোহাম্মদ (৪৮)।
পরে চেয়ারম্যানের অবস্থার অবনতি হলে গত ১৩ এপ্রিল উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চিকিৎসা শেষে ২ মে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এরপর হৃদরোগ, প্রস্রাবে ইনফেকশন ও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে গত ৭ মে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ১৯ মে রাত ১০টার দিকে তার অবস্থার অবনতি হলে ওই হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। এরপর ৩১ মে বিকেল ৫টার দিকে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ ফরহাদ হোসেন (৩৪) ও আরিফুল ইসলাম আরিফকে (২৮) গ্রেপ্তার করে মতিঝিল থানা পুলিশ। পরে তারা জিজ্ঞাসাবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ তাদের অস্ত্র সরবরাহ করেছে বলে জানায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে এই তিনজনের নামে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছে। আর উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনায় করা মামলায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে এজাহারনামীয় দুজন। এজাহারনামীয়দের মধ্যে নূর মোহাম্মদ নামের একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আরেক এজাহারভুক্ত আসামি শাকিল কারাগারে রয়েছেন। আর এজাহারনামীয় প্রধান আসামিসহ চারজন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চেয়েছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী আমিনুর রশিদ খান তাপসের কাছে জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এমপি মোহন সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি না করে বরং খুনিদের শেল্টার দিয়ে আসছেন। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর এমপির ভাই জুনো খুনি আসাদের বাড়িতে গরুর খিচুড়ি মাংস খেয়ে খুনিদের নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করে। এতে প্রমাণিত হয়, এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য এমপি মোহনসহ তাঁর অনুসারীরা ছিল। তাই তাদের বিচার দাবিতে আমরা এই মামলায় তাদেরকে আসামি হিসেবে দেখতে চাই।’
তখন কেন আসামি করা হলো না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তাপস বলেন, ‘আসামি করতে চেয়েছিলাম, পুলিশের জন্য পারিনি।’
সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঞা মোহনের কাছে জানতে চাইলে তিনি দু:খপ্রকাশ করে বলেন, ‘মরহুম উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খান ছিলেন আমার পিতৃতুল্য অভিভাবক। তাঁর মৃত্যুতে আমিও আমার অভিভাবক হারিয়ে ব্যথিত।’
সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করে অবিলম্বে প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়ে সংসদ সদস্য মোহন বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি চিহ্নিত মহল ষড়যন্ত্র করছে।’
নিহতের ছেলে তাপসের অভিযোগকে মিথ্যা আখ্যায়িত করেন জহিরুল হক ভূঞা মোহন।
/ওয়াইএ/