ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

নরসুন্দায় অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার

নরসুন্দায় অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার

নান্দাইলের সিংরইলের বোরাঘাট বাজারের পাশে নরসুন্দা নদে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার- সমকাল

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

নান্দাইল উপজেলার নরসুন্দা নদ এবং এর বিভিন্ন শাখায় একাধিক বাঁধ দিয়ে মৎস্য নিধন চলছে। এসব বাঁধে নিষিদ্ধ ছাবা এবং চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার করে মাছ ধরছেন কিছু লোক। এতে মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে পড়লেও নীরব প্রশাসন। এ কারণে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ মৎস্য সংরক্ষণ আইন-১৯৫০ এর চার নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে, নদী-নালা, খাল-বিলে স্থায়ী স্থাপনার মাধ্যমে (ফিক্সড ইঞ্জিন) মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ। এমনটি ঘটলে স্থায়ী স্থাপনা অপসারণ এবং বাজেয়াপ্ত করা যাবে। অথচ নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নে নরসুন্ধা নদের বেশ কয়েকটি স্থানে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ নিধন চলছে।

সরেজমিন সিংরইল ইউনিয়নের বোরাঘাট গ্রামে বাজারের সেতুর পাশে নরসুন্ধা নদে একটি বাঁধ দেখতে পাওয়া গেছে। বাঁশের ঘন বানা (এক ধরনের বেড়া) এবং ঘন জাল দিয়ে তৈরি এ বাঁধের মাঝখানে রাখা হয়েছে একটু ফাঁকা। এই ফাঁকা জায়গায় পেতে রাখা হয়েছে ঘন খরা জাল। তার দুই পাশে আবার চায়না দুয়ারি জাল। যেভাবে ফাঁদ পাতা হয়েছে তাতে সব ধরনের মাছ আটকা পড়ছে। ধরা পড়ছে মাছের পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় আব্দুল হাকিম, শংকর চন্দ্র সিং, ফিরোজ মিয়াগংরা বাঁধের সঙ্গে জড়িত। কয়েক বছর ধরে এভাবে মাছ শিকার করে যাচ্ছেন তারা। নদের পাশের ঘাগৈর গ্রামেও দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে এমন দুটি বাঁধ।

এলাকাবাসী জানান, শুধু এই দুই-তিনটি নয়, স্থানীয় বারইখালি খালসহ আশপাশের এক কিলোমিটার নদে এমন আরও ৭-৮টি বাঁধ রয়েছে। এভাবে মাছ শিকারে লাভবান হচ্ছে কিছু মানুষ। তবে মাছের স্বাধীন চলাফেরা এবং প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, কমে যাচ্ছে মাছের উৎপাদন। এতে নষ্ট হচ্ছে জীব বৈচিত্র্য। তাদের অভিযোগ, এভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। ফলে এই নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে মাছ নিধন প্রসারিত হচ্ছে।

মোফাজ্জল হোসেন নামে এক বৃদ্ধ বলেন, ‘আগে তো আমরা নদ-নদীতে নেমে মাছ ধরতাম। কিন্তু অসংখ্য বাঁধ হওয়ার কারণে এখন আর কেউ নদে নামতে পারেন না। কোনো নৌকাও চলাচল করতে দেয় না বাঁধ মালিকরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় মৎস্য অফিস ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা।

জানতে চাইলে বোরাঘাট সেতু-সংলগ্ন বাঁধের সঙ্গে জড়িত দিলারপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। চাচাত ভাই টিটো মিয়া বলেন, ‘অনেকেইতো এভাবে মাছ ধরছে। আমরা ধরলে ক্ষতি কী? শংকর চন্দ্র সিংয়ের বাড়িতে গেলে তাঁর স্ত্রী জানান, মোবাইল ফোন বাড়িতে রেখে তিনি (শংকর) বাহিরে গেছেন।

সিংরইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের দাবি, নদে তো স্থায়ী কোনো বাঁধ নেই, যেগুলো আছে সেখানে খরা (মাছ ধরার এক প্রকার জাল) দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে।
মৎস্য কর্মকর্তা শাহানা নাজনীনের ভাষ্য,  দ্রুতই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×