ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

জলের নিচে জলকপাট

জলের নিচে জলকপাট

সীতাকুণ্ডের বদরখালী খালের উপর নির্মিত স্লুইচগেটটি অকেজো হয়ে পানিতে ডুবে আছে সমকাল

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ও রামগতি (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

ফসল আর জলবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষা পেতে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে করা হয় জলকপাট। কিন্তু জনস্বার্থে করা এ জলকপাট এখন কৃষক ও সাধারণ মানুষের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এর বেশ কিছু অংশ ভেঙে গেছে, দেবে গেছে গেট। আবার কতগুলো ওঠানো-নামানো করা যায় না। ফলে নোনাপানি থেকে ফসল রক্ষা, পানি ধরে রাখা ও খালের পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিন জলকপাটের এ চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায়।

১৯৬২ সালে সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের বদরখালী খালের ওপর ছয় কপাটের বদরখালী জলকপাটটি নির্মাণ করা হয়। অকেজো হয়ে পড়ায় ২০১৮ সালে ইউজ কিট ইন্টারন্যাশনাল এর সংস্কার কাজ শুরু করে। কিন্তু কাজ শেষ না করে পালিয়ে যান ঠিকাদার। এর পর এলাকায় সাগরের লবণাক্ত পানি প্রবেশ ঠেকাতে সেখানে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। টানা বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢলে সেই বাঁধটিও ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে আউশ ধান ও আমনের বীজতলা, সবজি ক্ষেত, উপকূলীয় এলাকার মাছের ঘের, রাস্তাঘাট। এই মুহূর্তে বাঁধটি খুলে দিলে কৃষক আরও ক্ষতির মুখে পড়বেন। নতুন করে জলকপাাট নির্মাণ না করলে এলাকাবাসী এ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পাবে না– বলছে পাউবো কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন দেখো যায়, বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে ছয় কপাটের জলকপাটটি। বর্ষায় পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প আরও দুটি কপাট করা হয়। এ দুটি কপাট দিয়ে পানি যাওয়া দূরের কথা, উল্টো জোয়ারের সঙ্গে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ঢুকছে। সামনেই বড় বাঁধ। সেটিও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়।
পূর্ব সৈয়দপুর গ্রামের কৃষক পিয়ালাল চন্দ্রনাথ বলেন, দুই একর জমিতে আউশ আবাদ করেছি। আমনের জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় একদিকে ধান অন্যদিকে বীজতলা নষ্ট হচ্ছে।

পূর্ব সৈয়দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এইচ এম তাজুল ইসলাম নিজামী বলেন, বদরখালী খালে বাঁধ থাকায় উজানের পাহাড়ি ঢলের পানিতে ইউনিয়নের উত্তর বগাচতর, দক্ষিণ বগাচতর, মহানগর, বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের বহরপুর ও মিরসরাই উপজেলার বালিয়াতি গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কৃষি ফসল, মাছের ঘের ডুবে গেছে, নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট। পাউবো কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা দ্রুত কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিব উল্যাহ বলেন, সৈয়দপুর ও বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নে ব্যাপক চাষাবাদ হয়। এখানকার ফসল দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। বদরখালী জলকপাটটি অকেজো হয়ে থাকায় কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। এতে প্রায় তিন হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় সহকারী প্রকৌশলী প্রশান্ত তালুকদার বলেন, জলকপাট নির্মাণের প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। সেটি পাস হলেই কাজ শুরু করা হবে। আপাতত পাশের দুই কপাট ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নে মেঘনা নদীসংলগ্ন জলকপাটটিও কোনো কাজে আসছে না। এর সব ক’টি গেট ভেঙে গেছে। এ অবস্থায় কয়েক দিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে এলাকাটি। এ সমস্যা সমাধানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের জানালেও কোনো কাজ হয়নি। জনপ্রতিনিধিদেরও যেন কোনো দায় নেই। ফলে অধিক জোয়ারের পানিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। 

কৃষক মো. জমির উদ্দিন জানান, জলকপাট কারণে প্রতি বছরই জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে যায়। ঘরবাড়ির আঙিনা ও ফসল তলিয়ে যায়। চেয়ারম্যান মেম্বারদের বললেও কোনো কাজ হয় না।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি সদস্য বরাকাত হোসেন জনি বলেন, এ সমস্যা সমাধান করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আমাদের কী করার আছে।

রামগতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আ ম ম নাঈম বলেন, জলকপাটে প্রবেশ মুখে পলি জমায় পানি বের হতে পারছে না। পলি অপসারণ করা না গেলে কিছুই করার নেই।

আরও পড়ুন

×