দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি
চায়ের কাপে চিনি-পানি কমেছে

তাড়াশের গোনতা বাজারের একটি দোকানে রোববার চা পান করছেন কয়েকজন - সমকাল
এম. আতিকুল ইসলাম বুলবুল, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০১:০২ | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০১:০২
তাড়াশের বারোয়ারী বটতলার পুরোনো চায়ের দোকান সকালী দীনবন্ধু মিষ্ঠান্ন ভান্ডার। মালিক বলাই সরকার প্রায় ৩৮ বছর ধরে মিষ্টি, শিঙাড়া, সমুচা, খাজাসহ নানা ধরনের খাবার বিক্রি করেন। সকালে নাশতার সঙ্গে চা পান করতে অনেকে ভিড় করেন। তবে উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। চিনি, আদা, লবঙ্গ, দুধ, লিকারসহ পানি কম দিয়ে চা বিক্রি করছেন। মানুষ আগের মতো পান না করায় চা বিক্রিতে লাভ হচ্ছে না বলে জানান বলাই সরকার।
অথচ সুপেয় পানির পরই চা বেশি পান করা একটি পানীয়। উপমহাদেশে চা পানের ঐতিহ্য বহু পুরোনো। তবে পাতার গুঁড়া, চিনি, আদা, মসলা ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে কাপে পানীয় চায়ের পরিমাণ অর্ধেকে নেমেছে। পান করা মানুষের সংখ্যাও কমেছে বলে জানান লালুয়া মাঝিড়া গ্রামের বিক্রেতা তফিজুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, এখন দুধ চা প্রতি কাপ ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক বছর আগে ছিল ৬ থেকে ৮ টাকা। ৩ টাকার রং বা আদা চা এখন ৫ থেকে ৬ টাকা। আগে গড়ে প্রতিদিন ১২০ কাপ চা বিক্রি করতেন। এখন বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ কাপ।
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের তাড়াশসহ চলনবিলের আশপাশের বিভিন্ন উপজেলায় চা স্টল রয়েছে কয়েক হাজার। দোকানি চা বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি গুঁড়া পাতা ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এক বছর আগে ছিল ৩২০ টাকা। প্যাকেটজাত গুটি বা দানাদার চা পাতা ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আগে ছিল ৩৬০-৩৯০ টাকা। ৭০ টাকার ৭৫টির টি ব্যাগের বক্স বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আদা ২২০ টাকা কেজি হলেও ছয় মাস আগে ছিল ৯০-৯৫ টাকা।
লবঙ্গ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকায়, আগে ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। প্রতি মণ খড়ি (লাকড়ি) ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২০০ থেকে ২২০ টাকা। ৮৫০ টাকার গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়। বেশি বেড়েছে চিনির দাম। বৃহস্পতিবার চলনবিলের বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকায়। এক বছর আগেও ৭৫ থেকে ৮০ টাকা ছিল।
দাম বাড়লেও আগের মতো চা পান করেন বলে জানান খালকুলার বাসিন্দা মামুন বাহারী। তবে খরচ বেড়েছে। বিনোদপুরের বাবুল আক্তারের ভাষ্য, আগে দিনে চার থেকে পাঁচ কাপ চা পান করতেন। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন দু-তিন কাপ পান করেন।
নাদো সৈয়দপুরের নজিবর রহমান বলেন, আগে যিনি দিনে পাঁচ কাপ চা পান করতেন, এখন দুই বা তিন কাপ পান করছেন। খরচ বাঁচাতে দোকানিরা চিনি ও পানির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।
উপজেলা হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবু সাইদ তালুকদার বলেন, উপকণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রেতারাও প্রতি কাপ চায়ের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। ইউএনও মো. সোহেল রানা বলেন, যৌক্তিক দামের বেশি নিলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।