ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

কিস্তির টাকা নিয়ে এনজিওকর্মী ও পুলিশের ওপর হামলা, আহত ১০

কিস্তির টাকা নিয়ে এনজিওকর্মী ও পুলিশের ওপর হামলা, আহত ১০

আহতরা ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৪ | ০৯:৫৯ | আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪ | ১২:৩৭

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কিস্তির টাকা আদায়ের ঘটনা নিয়ে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও ভাঙ্গা থানা পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির অফিস স্টাফ ও ভাঙ্গা থানা পুলিশের দুইজন এসআইসহ ১০ জন আহত হন। 

শনিবার (২ মার্চ) রাতে উপজেলার আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।  রাতেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভাঙ্গা থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ মামুনুর রশিদ। 

তিনি জানান, পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতির ইউনিট ম্যানেজার আকতার হোসেনের অভিযোগের তদন্তে পুলিশ সরেজমিনে যায়। এ সময় পুলিশের কাজে বাধা দিতে একটি চক্র হঠাৎ বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পরে উত্তেজিত জনতা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় পুলিশের দুই এসআই ও চারজন কনস্টেবল আহত হন।

আহতরা হলেন, পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতির ইউনিট ম্যানেজার আক্তার হোসেন ও মাঠ সংগঠক মো. আবুল হাসান। আবুল বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশের মধ্যে আহত হয়েছেন ভাঙ্গা থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম, এসআই মনিরুল ইসলাম, কনস্টেবল লিটু শেখ, কনস্টেবল মুরাদ হোসেন, কনস্টেবল জাহিদ ও কনস্টেবল ফারুক। তারা সকলে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। 

জরুরি বিভাগের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার তানভির আহমেদ সমকালকে জানান, দুইজন এসআই ও ৪ জন পুলিশের কনস্টেবল হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের শরীরের আঘাতগুলো ইট ও লাঠির হতে পারে। এছাড়া এনজিওর পাঁচজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে এক মাঠকর্মী ভাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। একই ঘটনায় এক সন্তানসম্ভবা নারী হাসপাতালে আসেন। তিনি তাঁর শারীরিক কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি।

আকতারের অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল ১১টার দিকে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজারসহ পাঁচজন কিস্তির পাওনা টাকা আদায়ের জন্য আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী গ্রামের তারা মিয়ার বাড়িতে যায়। তারা বাড়িতে না থাকায় তাঁর মোবাইলে যোগাযোগ হয় আকতারের। এ সময় মোবাইলে কিস্তির পাওনা টাকা চাওয়ায় অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে আকতার ফোন কেটে দিয়ে অফিসের সবাইকে নিয়ে তারার বাড়ি থেকে ভাঙ্গা অফিসের উদ্দেশে রওনা হন। পথিমধ্যে তারা মিয়াসহ তাঁর সহযোগী প্রায় ৭-৮ জন অজ্ঞাত যুবক আকতার ও তাঁর অফিসের লোকজনের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় এলোপাতাড়ি মারপিট করে অফিসের স্টাফদের কাছে থাকা প্রায় দুই লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। পরে কিস্তির লোকদের ডাক চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। তাদেরকে উদ্ধার করে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এ ঘটনায় ভাঙ্গা থানায় গিয়ে অভিযোগ দেন আকতার হোসেন। 

পুলিশ জানায়, সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ ঘটনার তদন্তে শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ তারা মিয়ার বাড়িতে যায়। পুলিশ তারা মিয়াকে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সেখান থেকে তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এই দেখে তারার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী কনি বেগম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন। এরপর কনি বেগম স্ট্রোকে মারা গেছেন- এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষ উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশের দুইজন এসআই ও কনস্টেবলসহ ছয় পুলিশ আহত হয়। খবর পেয়ে ছুটে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাঙ্গা সার্কেল ও থানার ওসি। পরে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। আহত পুলিশদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।

আলগী ইউপি চেয়ারম্যান ম. ম সিদ্দিক মিয়া জানান, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক।

পল্লী প্রগতির পরিচালক মো. আকরাম হোসেন সমকালকে বলেন, দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ বিচারের দাবি জানাই। 

থানার উপ-পরিদর্শক আহত মনিরুল ইসলাম জানান, তারা মিয়া একজন চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী। তাঁর নামে চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আরও পড়ুন

×