৬০ হাজার টাকা জরিমানা, কান ধরিয়ে ৫০ বার ওঠবস
ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করায় পাঁচ তরুণের শাস্তি

প্রতিকী ছবি
ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৪ | ০০:৪৬
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় স্কুলছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করায় পাঁচ তরুণকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা এবং কান ধরিয়ে ৫০ বার ওঠবস করানো হয়েছে। গত রোববার উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের আব্দুর রশিদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সালিশ বৈঠকে এই শাস্তি ও জরিমানা করা হয়। তাৎক্ষণিক অল্প কিছু টাকা পরিশোধ করে ছাড়া পায় অভিযুক্তরা। তবে জরিমানার বাকি টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে তাদের পরিবার।
জানা গেছে, কয়েক ছাত্রী সুখাইড় গ্রামের সামনে দিয়ে আব্দুর রশিদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। রোববার তাদের অভিভাবকরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানান, ওইদিন বিকেলে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে সুখাইড় গ্রামের কয়েক তরুণ। অভিযুক্তরা ছাত্রীদের পিছু নিলে স্থানীয়রা তাদের আটকে রাখে। পরে অভিভাবকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দেড় শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক করা হয়। এতে প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এরশাদ মিয়া, দীপক রায় ও নুরু মিয়াসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
শাস্তি হিসেবে অভিযুক্তদের কান ধরিয়ে ৫০ বার ওঠবস করানো হয় এবং প্রত্যেককে ১২ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। ওই দিনই অভিযুক্তরা মোট ৪ হাজার টাকা পরিশোধ করেন এবং বাকি টাকা ঈদের পর পরিশোধের শর্তে ছাড়া পায়।
অভিযুক্ত এক তরুণের বড় ভাই বলেন, কান ধরিয়ে ওঠবস করানোয় বিচারপ্রার্থীরা সন্তুষ্ট ছিলেন। তারা টাকা চাননি এবং এ টাকা তারা নেবেনও না। তারপরও জরিমানা করা হয়েছে। সবাই মিলে সুদে চার হাজার টাকা জোগাড় করে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এরশাদ মিয়ার হাতে দিয়েছি। বাকি টাকা ঈদের পরে দিতে হবে। আমরা গরিব মানুষ, এত টাকা কীভাবে দেব?
এ বিষয়ে এরশাদ মিয়া বলেন, অভিযুক্তরা ছাত্রীদের দেখে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে পিছু নিয়েছিল। এতে তারা ভয় পেয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে অভিযুক্তরা এমন না করে, সেজন্য জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা কী করা হবে– জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, বিদ্যালয়ের ফান্ডে রাখা হবে। পরে সেই বক্তব্য বদলে ফেলেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উভয়পক্ষ স্থানীয়ভাবে সালিশ করে বিষয়টি শেষ করার উদ্যোগ নেয়। আমি সালিশে সভাপতি ছিলাম। এতে উপস্থিত ৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জরিমানা করা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুল কবির বলেন, এটি স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি না করে আইনি প্রক্রিয়ায় করা যেত।
ধর্মপাশা থানার ওসি মো. শামসুদ্দোহা জানান, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ভুক্তভোগী বা তাদের পরিবারের থেকে কেউ বিষয়টি জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন বলেন, বিষয়টি জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখব।
- বিষয় :
- ছাত্রী হয়রানি