ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

বরিশাল নগরী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আরেক পুকুর

বরিশাল নগরী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আরেক পুকুর

টিনের বেড়া দিয়ে লোকচক্ষুর আড়াল করে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর। বরিশাল নগরীর গোরস্তান রোড এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা সমকাল

 বরিশাল ব্যুরো

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:১০

নগরী থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে আরেকটি পুকুর। কয়েক মাস আগে সুতা দিয়ে পুকুরটিকে প্লট আকারে ভাগ করা হয়। ঈদের আগে টিনের বেড়া দিয়ে লোকচক্ষুর আড়াল করা হয়। এসব আয়োজন দেখে অনেকেই বলছিলেন– পুকুরটি হয়তো বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সেই ধারণাই সত্যি হলো। ঈদের ছুটিতে বালু ফেলে সেটি ভরাট করা শুরু হয়েছে।

বরিশাল নগরীর আবাসিক এলাকা গোরস্তান রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন বটতলা মোড়ে সড়কের পাশে বড় আকারের পুকুরটিতে প্রতি রাতে ট্রাক থেকে বালু ফেলা হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে ভরাটের আয়োজন সম্পন্ন হলেও সেটি রক্ষায় সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর বা কোনো পরিবেশবাদী সংগঠন এগিয়ে আসেনি।
স্থানীয়রা জানান, বায়না সূত্রে মালিক হয়ে পুকুর ভরাটে নেপথ্যে কাজ করছেন সরকারি কৌঁসুলি আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট ওবায়েদুল্লাহ সাজু। তিনি বরিশালের অন্যতম ধনাঢ্য জমি ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসায়ী। কয়েক মাস আগে অদূরে একই মালিকের ওয়ারিশদের আরেকটি ছোট পুকুর ভরাট শেষে প্লট করে বিক্রি করছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, প্রধান সড়ক-সংলগ্ন পুকুরটির পেছনের অংশ থেকে ভরাট চলছে। এরই মধ্যে কয়েক শতক ভরাট হয়েছে। পুকুরপাড়ের দোকানি মো. ফয়সাল জানান, ঈদের আগে থেকে প্রতি রাতে ট্রাকে বালু ফেলা হচ্ছে। একইভাবে পেছনের ছোট পুকুরটিও ভরাট হয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রায় দুই একর জমির মালিক ছিলেন কেএম হুদা (প্রয়াত) নামে এক ব্যক্তি। তাঁর বাড়িটি ‘হুদা বাড়ি’ নামে পরিচিত। তাঁর একমাত্র ছেলে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা খন্দকার সাইফুল হুদা ও ৬ মেয়ে ওয়ারিশ সূত্রে মালিক হয়েছেন। সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে বিক্রি শুরু হলে বোনদের অংশের বেশির ভাগ কেনেন অ্যাডভোকেট সাজু। ক্রয় সূত্রে বাড়ির পেছনের ছোট পুকুরটি ভরাটের পর প্লট করে বিক্রি চলছে। সাইফুল হুদার মালিকানায় থাকা বড় পুকুরটিও ভরাটে নেপথ্যে কাজ করছেন সাজু। স্থানীয়দের ধারণা, এ পুকুরটিরও বায়না করেছেন তিনি।

পুকুর-সংলগ্ন বাসা বদর ভিলায় গিয়ে পাওয়া যায়নি মালিক সাইফুল হুদাকে। তাঁর স্ত্রী নাহিদ সুলতানা বলেন, এটি পুকুর নয়, ডোবা। মাছ চাষের জন্য তারাই খনন করেছিলেন। এটি আয়তনে ১২ শতক। বিক্রি করেননি দাবি করে নাহিদ সুলতানা বলেন, স্টল করার জন্য নিজেরাই ভরাট করছেন। পেছনের বোনদের অংশের পুকুর অ্যাডভোকেট সাজু কিনে ভরাট করেছেন বলে জানান নাহিদ সুলতানা।

পুকুরটির আয়তন ১২ শতক বলে নাহিদ সুলতানা দাবি করলেও সেটি অনেক বড়। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট ওবায়দুল্লাহ সাজু বলেন, তিনি পেছনের একটি ডোবা আকৃতির পুকুর ভরে প্লট করেছেন। সামনের পুকুরটি ওয়ারিশ সূত্রে মালিক সাইফুল হুদা ভরাট করছেন।
পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশালের সমন্বয়ক লিংকন বায়েন বলেন, পরিবেশ আইন অনুযায়ী জলাশয় ভরাট করা যাবে না। তিনি গোরস্তান রোডের পুকুরটি ভরাট ঠেকাতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনকে অবহিত করবেন। তিনি আরও বলেন, অ্যাডভোকেট সাজু নগরের যেখানে জলাশয় রয়েছে, সেটাই দখল ও ভরাট করে বাণিজ্য করছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শেখ কামাল মেহেদী বলেন, নগরীর পুকুর ভরাট বন্ধে তারা তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে কোন কোন পুকুর ভরাটের অপচেষ্টা চলছে সেই তালিকা দিয়ে কী লাভ? তারা তো ম্যাজিস্ট্রেট নন, কেবল ঘটনাস্থলে খতিয়ে দেখতে পারেন। এ বিষয়ে জানতে সিটি করপোরেশনের সচিব মাসুমা আক্তারের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র জিয়াউর রহমান বিপ্লব জানান, গোরস্তান রোডে প্রধান সড়কের পাশে পুকুরের চারপাশে টিনের বেড়া দেখেছেন। পেছনের পুকুর আগেই ভরাট হয়েছে। সেখানকার পুরো সম্পত্তি অ্যাডভোকেট সাজু কিনে ভাগভাটোয়ারা করেছেন। সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে কী উদ্যোগ নিচ্ছে– জানতে চাইলে বিপ্লব বলেন, ‘দেখি কী করা যায়।’

আরও পড়ুন

×