প্রার্থী ও ভোটারদের হুমকি, ভিডিও ভাইরাল

উপজেলা নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান উজ্জলের পক্ষে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেন চন্দ্রপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান। ছবি: সংগৃহীত
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪ | ০৪:৫৬
শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের একটি সভায় ভোটার ও প্রার্থীকে হুমকি দিচ্ছেন এক ইউপি চেয়ারম্যান, এমন ৪ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
সদরের চন্দ্রপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম খানের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপু ও ওই সভায় উপস্থিত ভোটারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার রাতে চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রিপন সরদারের বাড়িতে ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বক্তব্য দেন ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম।
ভিডিওতে শোনা যায়, আব্দুস সালাম বলেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ওকে (দিপু) শূন্য ভোট দিতে হইব। ও ভোট দিতেও যেন আইতে না পারে। এই ব্যবস্থা করতে পারবেন?
ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভোট হবে ইভিএমে। পরিষ্কার কথা ভাই দলে ঢুকে কেউ চালাকি করবেন না। আপনারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন, বুথ থাকুক। বলবেন এইয়া বুঝি না। ইভিএমে কখনো ভোট দেই নাই। আপনি আসেন আমার ভোট দিয়া যান। এই কথা আপনি ভেতরে বইসা বলবেন। আমার এজেন্ট শুনব। আমি ভোট দেব ঘোড়া মার্কায়, ভোট দেব তালা মার্কায়, ভোট দেব ফুটবল মার্কায়। পারবেন? যে এইডা বলতে না পারবেন সে সন্দেহের তালিকায়। যে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে না যাইবেন, সেও সন্দেহের তালিকায়।
তিনি আরও বলেন, আর দিপু যদি আমাদের চন্দ্রপুর ঢোকে। ওরা যদি চন্দ্রপুরে ভোট চাইতে আসে, ওগো দৌড়াইতে পারুম না? দৌড়াইতে পারবেন না? কালকে দিপুর বউ ভোট চাইতে আইছিল, অগো দৌড়াইয়া দিছে। আজ থেকে ওরা যাতে চন্দ্রপুরে ভোট চাইতে না আইতে পারে। পারবেন? কোনো হুমকি-ধমকি মারবেন না। সামনা-সামনি মারবেন। স্পষ্ট কথা, দুই কুল রক্ষা কইরা চলবেন না। তলে-তলে খাতির রাইখেন না। ওদের সাথে কারা ভোট চাইতে যান তা খবর পাই। তলে তলে খাতির রাখলে দিপুর মাইরও খাইবেন, আমাদের মাইরও খাইবেন। চন্দ্রপুর থেকে কাস্টিং ভোটের শতভাগ দিতে চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুস সালাম খান বলেন, নির্বাচনী সভায় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা বলেছি। ইভিএমএ কীভাবে ভোট দিতে হবে, সে বিষয়ে ধারণা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, কাউকে কোনো হুমকি দেইনি। আর দিপু নিজেই আমার বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা বলতাছে। দিপুই বরং আমাকে হুমকি দিচ্ছেন। আমার নামে যেসব ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে সেগুলো এডিট করা।
ওই ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান উজ্জল, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তালা প্রতীকের সাখাওয়াত হোসেন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ফুটবল প্রতীকের সামিনা ইয়াসমিনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান উজ্জল বলেন, আমি ওই সভার ভিডিওর ব্যাপারে কিছু জানি না। আর আমার সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, এমন কিছু বলবেন না বা এমন কোন কাজ করবেন না যাতে আমাদের সম্মানহানি হয়। অন্য প্রার্থীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেই আমাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে হবে।
চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপু বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যর ইঙ্গিতে তার লোকজন আমাকে নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে, প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। আমি রিটার্নিং অফিসার ও থানায় কয়েকবার অভিযোগ দিয়েছি। প্রতিকার পাচ্ছি না, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাইনউদ্দিন আহমেদ বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার সময় ভোটারদের ও কোনো প্রার্থীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আমরা পাইনি। কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেলে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ এনে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাচন আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
- বিষয় :
- শরীয়তপুর
- ভিডিও ফাঁস