এমভি আবদুল্লাহ
জিম্মিদশার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা জানালেন তৌফিক

বাড়ি ফেরার পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কেটে কাটেন তৌফিকুল ইসলাম
খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪ | ১৮:৫৯
সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজের দ্বিতীয় প্রকৌশলী মো. তৌফিকুল ইসলাম অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৫ মাস ২০ দিন পর বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে খুলনা নগরীর করিমনগর এলাকার বাড়িতে পৌঁছান তিনি।
তোফিককে পেয়ে তার স্ত্রী, দুই ছেলে-মেয়ে, বাবা-মা, দুই ভাই, শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের সদস্যরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এলাকার লোকজন তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। তৌফিকের বাবা বাড়িতে আসা লোকজনকে মিষ্টিমুখ করান। এরপর সাংবাদিকদের কাছে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকার ভয়াবহ সেই দিনগুলোর কথা তুলে ধরেন তৌফিক।
তৌফিক বলেন, এখন খুবই ভালো লাগছে। জিম্মি থাকাকালীন আমাদের চেয়ে আমাদের পরিবারের লোকজন আরও বেশি দুশ্চিন্তায় ছিল। বাড়িতে আসায় পরিবারের লোকজন দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছে।
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহ এবং জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। তৌফিক ওই ২৩ নাবিকের একজন।
তৌফিক খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ২০/১ করিমনগর এলাকার মো. ইকবাল এবং দিল আফরোজ দম্পতির ছেলে। ৩ ভাইয়ের মধ্যে তৌফিক সবার ছোট। তার দুটি সন্তান রয়েছে। গত ২৫ নভেম্বর বাড়ি থেকে জাহাজে গিয়েছিলেন তিনি।
ঈদুল আজহার পর আবার জাহাজে যাবেন বলেও জানান এই নাবিক। এ সময় জাহাজ মালিক ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
তিনি বলেন, তখন রমজান মাস ছিল। জলদস্যুরা শারীরিক নির্যাতন করেনি। তবে মাঝেমাঝে দুর্ব্যবহার করত এবং আমারদের ভয় দেখাত। তখন মানসিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। কী হবে বুঝতে পারছিলাম না। ফিরে আসতে পারবো কিনা তাও জানতাম না। সেই দিনগুলো ছিল খুবই ভয়াবহ।
এই নাবিক জানান, জলদস্যুরা নামাজ পড়তে ও রোজা রাখতে বাধা দেয়নি। জাহাজের ক্যাপ্টেন বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন।
তৌফিক বলেন, ২০০৮ সাল থেকে জাহাজে চাকরি করি। অনেকবার এই রুটে যাওয়া-আসা করেছি। কিন্তু আগে এখনও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি।
তৌফিকের স্ত্রী জোবাইদা নোমান বলেন, বিষাদময় দিনগুলো চলে গেছে। এগুলো আর মনে করতে চাই না। আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া, এরকম দিন আর কারও জীবনে না আসুক।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী গরুর মাংসের কালো ভুনা ও পুডিং খেতে পছন্দ করে। পাশাপাশি তার পছন্দের অন্যান্য খাবারও রান্না করেছি।
তৌফিকের মা দিল আফরোজ বলেন, আমার বুকের ধন ফিরে এসেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।
তৌফিকের শ্যালক শিব্বিন আহমেদ বলেন, বাবাকে জিম্মি করার খবর শোনার পর থেকে তার ছেলে-মেয়ে বিষন্ন হয়ে থাকত। বাবা ফিরে আসায় বাচ্চারাও প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
- বিষয় :
- এমভি আবদুল্লাহ