ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

যৌতুকের বলি গৃহবধূ, হাসপাতালে লাশ রেখে পালাল শাশুড়ি-ননদ

যৌতুকের বলি গৃহবধূ, হাসপাতালে লাশ রেখে পালাল শাশুড়ি-ননদ

বিনা খাতুনের শ্বশুর বাড়িতে ঝুলছে তালা। ছবি: সমকাল

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪ | ২০:৪২ | আপডেট: ১৫ মে ২০২৪ | ২০:৫৩

বিয়ের পর যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূর ওপর চলত নির্যাতন। শাশুড়ি-ননদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বছরখানেক বাবার বাড়িতে থাকেন বিনা খাতুন। কয়েক মাস আগে তাঁর একটি পুত্রসন্তান হয়। এরপর গত শুক্রবার ২৫ হাজার টাকা নিয়ে স্বামীর বাড়ি ওঠেন তিনি। বুধবার দুপুরে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁর লাশ ফেলে পালিয়ে গেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। শাশুড়ি শিল্পী খাতুন ও ননদ মুক্তা খাতুন মিলে বিনাকে নির্যাতনে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।

বিনা খাতুন (২২) কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের নন্দলালপুর গ্রামের মাঠপাড়া এলাকার আমিন হোসেনের স্ত্রী। তাঁর বাবা বিল্লাল শেখের বাড়ি যদুবয়রা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামে।

জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে মোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে আমিন হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় বিনার। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌতুকের জন্য তাঁকে মারধর করত। এসব নিয়ে একাধিকবার সালিশ হয়। নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় এক বছর বাবার বাড়িতে থাকেন। সাত মাস আগে কোলজুড়ে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। এর পর ২৫ হাজার টাকাসহ সন্তান নিয়ে গত শুক্রবার শ্বশুরবাড়ি যান বিনা। বুধবার দুপুরে শাশুড়ি শিল্পী (৪৫) ও ননদ মুক্তা (২৫) তাঁকে মারধরের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে এবং লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়।

বিকেলে থানায় গিয়ে দেখা যায়, বারান্দায় একটি কাঠের বেঞ্চে প্যাকেটে মোড়ানো বিনার মরদেহ। থানার বাইরে স্বজনের আহজারি চলছে। এ সময় বাবা বিল্লাল শেখ বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে শাশুড়ি ও স্বামী পরিত্যক্তা ননদ ১০ লাখ টাকা এবং একটি মোটরসাইকেলের জন্য নির্যাতন করত বিনাকে। আমি গরিব বলে টাকা দিতে পারিনি। মেয়ে আমার নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় এক বছর আমার বাড়িতেই ছিল। গত শুক্রবার ২৫ হাজার টাকাসহ শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়েছিলাম। তবুও আজ (বুধবার) শাশুড়ি আর ননদ মিলে তাকে হত্যা করে হাসপাতালে লাশ রেখে পালিয়েছে। থানায় মামলা করব।’

বুধবার বিকেলে বিনার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনশেড বাড়িতে সুনসান নীরবতা। দরজায় তালা ঝুলছে। দরজার পাশে ইটের দেয়াল একটুখানি ভাঙা। ঘরের ভেতরে কয়েক টুকরো ওড়নার কাটা অংশ পড়ে আছে।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক প্রতিবেশী জানান, বুধবার বেলা ১১টার দিকে গৃহবধূ বিনাকে বাড়ির বাইরে বসে কাঁদতে দেখেন তিনি। কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করলে বিনা বলেন, শাশুড়ি-ননদ মারধর করেছে। তাঁর স্বামী ঢাকায় থেকে কলার ব্যবসা করেন। ঘটনার সময় তাঁর শ্বশুরও বাড়িতে ছিলেন না। আরেক নারীর দাবি, দুপুরে ভ্যানে করে বিনাকে হাসপাতালের দিকে নিয়ে গিয়েছিল শাশুড়ি ও ননদ। কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি।

কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দিবাকর হালদারের ভাষ্য, হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। 

আরও পড়ুন

×