‘হল সুপারভাইজার’ নিয়োগকে ‘ক্রুটিপূর্ণ’ বলছে ইউজিসি, তদন্ত সঠিক নয় দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের

ফাইল ফটো
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪ | ১৪:৪৪ | আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ | ১৪:৫১
প্রশাসনিক কাজে তিন বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, বিজ্ঞপ্তির এমন শর্ত ভঙ্গ করে ‘জাল সনদে’ নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সুপারভাইজার সোহেল রানার বিরুদ্ধে। নিয়োগে ‘অনিয়মের’ কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) অভিযোগ জানায় অপর নারী চাকরিপ্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জাহানারা মুক্তা। এ অভিযোগের তদন্তে নামে ইউজিসির তদন্ত কমিটি। তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ‘হল সুপারভাইজার’ পদে নিয়োগকে ক্রুটিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটকে চিঠি দিয়েছে।
তবে ইউজিসির তদন্ত মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইউজিসির তদন্ত সঠিক নয় জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘ইউজিসি বলেছে বিষয়টি সিন্ডিকেটে নিয়ে যাও, ইউজিসির কথা মতো আমরা সিন্ডিকেটে নিয়ে যাব। সিন্ডিকেট সদস্যরা যে মত দেবে, তাতে যদি কারও চাকরি থাকে থাকবে, না থাকলে থাকবে না। কারও প্রতি আমাদের আলাদা পক্ষপাত নেই।’
এদিকে এই নিয়োগে ‘অনিয়ম-দুর্নীতির’ অভিযোগ এনে প্রতিকার চেয়েছেন ইউজিসিতে অভিযোগকারী ওই নারী চাকরিপ্রার্থী। জানা যায়, ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য পদের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের জন্য ‘হল সুপারভাইজার’ পদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। পদটির জন্য আবেদনকারীর অন্যান্য যোগ্যতার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা হিসেবে (ক) সরকারি/ আধা সরকারি/স্বায়িত্বশাসিত/ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কাজে তিন বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২তম সিন্ডিকেটে সোহেল রানা নিয়োগ পান।
এরপর রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে তার সনদ সংগ্রহ করেন জাহানারা মুক্তা। তাতে দেখা যায়, সোহেল রানা ২ বছর ১ মাসের অভিজ্ঞতার সনদ দাখিল করেন সেখানে মন্তব্যের জায়গায়, ‘আবেদনের (ক) শর্ত পূরণ করেননি’ উল্লেখ ছিল। এই নিয়োগের বিরুদ্ধে আরও কিছু তথ্য শিক্ষামন্ত্রী ও ইউজিসির উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। অভিযোগের অনুলিপি দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে।
অভিজ্ঞতা সনদটি যাচাইয়ের জন্য ২৯ ফেব্রুয়ারি সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গুজিয়াম আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে চিঠি দেন কমিশন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুনের দেওয়া জবাবে ইউজিসি বলেছে, প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হল সুপারভাইজার’ পদে নিয়োগটি ক্রুটিপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খাত হতে সম্মানি দেওয়া হয় এমন খণ্ডকালীন কাজের অভিজ্ঞতার সনদের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত/স্থায়ী পদের বিপরীতে জনবল নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ আছে কিনা সেটি বিবেচ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন সিন্ডিকেটে বিষয়টি উপস্থাপন করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং কমিশনকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, কমিশনের কাছে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। যেহেতু নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সিন্ডিকেটকেই নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
অভিযোগকারী জাহানারা মুক্তা বলেন, ‘অবৈধপন্থা অবলম্বন করে অর্থের বিনিময়ে জাল সনদে সোহেল রানাকে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এজন্যই বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করে ইউজিসি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি।’
তবে সোহেল রানার দাবি, তিনি গুজিয়াম আলিম মাদ্রাসায় কম্পিউটার অপারেটর কাম হিসাবরক্ষক (খণ্ডকালীন) হিসেবে কাজ করেছেন। পেয়েছেন তিন বছরের অভিজ্ঞতার সনদ।
- বিষয় :
- ত্রিশাল