মেহেরপুরে আমের আকাল বছর

মেহেরপুর সদরের উজুলপুরের আমবাগানের কোনো গাছেই আমের দেখা মেলেনি সমকাল
ফারুক হোসেন, মেহেরপুর
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪ | ২২:৫১
মেহেরপুরের বাগানগুলোতে ১৫ মে থেকে আঁটি ও বোম্বাই জাতের আম সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে তিন দিনেও বাজারে সুস্বাদু দুই জাতের আমের দেখা মেলেনি। চাষিরা জানিয়েছেন, এবার গাছে মুকুল ধরেছিল কম। যেসব গাছে ভালো পরিমাণ মুকুল এসেছিল, সেগুলোর বেশির ভাগই তীব্র তাপদাহে ঝরে গেছে। ফলে এবার জেলার অর্ধেকের বেশি গাছ আমহীন। এ কারণে হতাশা ঘিরে ধরেছে চাষিদের।
সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের মেহেরুল ইসলামের প্রায় তিন বিঘা জমিতে আমের বাগান রয়েছে। তিনি গতকাল জানান, এ বছর এমনিতেই গাছে আমের মুকুল কম এসেছিল। ফলে গুটিও কম হয়েছিল। যেসব গুটি ধরেছিল, তাও তীব্র তাপদাহের কারণে ঝরে গেছে।
আম রক্ষায় এই চাষি গাছে সেচ দেওয়াসহ নানাভাবে পরিচর্যা করেন। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। মেহেরুল বলেন, কোনো কোনো বাগানের গাছে আম নেই বললেই চলে। যাদের গাছে আম আছে, তারা এবার দামে পুষিয়ে নেবেন।
একই উপজেলার আমঝুপির আকতারুজ্জামানের বাগানের আয়তন প্রায় পাঁচ বিঘা। এখানে নানা জাতের ৩৪টি গাছ রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের আশায় ২০১৬ সালে তিনি প্রথমবারের মতো ফ্রুট প্রটেকশন ব্যাগিং পদ্ধতিতে বাগান শুরু করছেন। সেবার ভালো মুনাফাও করেন। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে আকতারুজ্জামানের মতো মেহেরপুরের অন্য চাষিদের বাগানের আমও ইউরোপে সুনাম কুড়ায়।
আকতারুজ্জামান সমকালকে বলেন, ভালো দামের আশায় বহু বাগানের মালিক ব্যাগিং শুরু করেন। করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির কারণে ২০১৯ সালের পর রপ্তানিকারকরা আর মেহেরপুরে আসছেন না। ফলে ওই বাগানিদের লোকসান গুনতে হয়। বাধ্য হয়ে ২০২৩ সালে ব্যাগিং বন্ধ করে দেন।
মেহেরপুরের হিমসাগর, ল্যাংড়া, আঁটি, বোম্বাই, ফজলি, আম্রপালিসহ নানা জাতের আমের কদর দেশজুড়ে। বিশেষ করে হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। জেলা কৃষি বিভাগ ও প্রশাসন ২৫ মে হিমসাগর, ৩০ জুন ল্যাংড়া ও ৫ জুন থেকে আম্রপালি সংগ্রহের নির্দেশনা দিয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মেহেরপুরে ২ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬ হাজার টন। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, এবার আমের আকালের বছর (অফ ইয়ার)। যে কারণে উৎপাদন অর্ধেকেরও কম হবে বলে মনে করছেন তারা।
এসব কারণে বিপাকে পড়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরাও। ঢাকার আম ব্যবসায়ী রশিদুল হাসান এবার মেহেরপুরে ছয়টি বাগান কেনেন ২২ লাখ টাকায়। তিনি বলেন, ‘মুকুলের সময় বাগান কিনেছিলাম। কিন্তু আমের ফলন ভালো আসেনি। লোকসানের মুখে পড়েছি। গাছে যে আম আছে তাতে বাজারে ভালো দাম না পেলে আরও ক্ষতির মুখে পড়ব। আশা করছি, আমের সরবরাহ কম হওয়ায় ভালো দাম পাব।’
তাঁর ভাষ্য, এখানে দাম ভালো মিললে রাজশাহী ও সাতক্ষীরার আমে বাজার সয়লাব হয়ে যাবে। তাই মেহেরপুরে কাঁচামাল সংরক্ষণাগারের প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন। তাহলে আম কিছুদিন সংরক্ষণ করে বিক্রি করতে পারতেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপপরিচালক বিজয়কৃষ্ণ হালদার বলেন, এ বছর আমের অফ ইয়ার হওয়ায় ভালো ফলন আসেনি। তবে যা আছে সেগুলো চাষিরা যাতে ভালো দামে বিক্রি করতে পারেন, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আম পরিপুষ্ট হওয়ার পর বাজারে ছাড়তে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। একই সঙ্গে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করতে সতর্ক করে দিচ্ছেন।
- বিষয় :
- আম