পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ, জলাবদ্ধতার কবলে পাঁচ গ্রামের মানুষ

বম্বু ইউনিয়নের ধারকী আকন্দপাড়ায় সড়কে পানি জমে দুর্ভোগ
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪ | ২০:৩০ | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ | ২০:৩২
পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ বন্ধ করে দেওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে জয়পুরহাট সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের চার হাজার মানুষ পানিবন্দি জীবন কাটাচ্ছে। কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে গ্রামগুলোর পথঘাট ডুবে আছে। বর্ষার পানির সঙ্গে ড্রেনের পানি মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেই দুর্গন্ধযুক্ত পানি ভেঙে যাতায়াত করছে গ্রামের মানুষ।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, এক সময় ধারকী গ্রামের কয়েক শরিকের মালিকানাধীন পরিত্যক্ত দুটি পুকুর দিয়ে ড্রেনের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হয়ে আসছিল। প্রভাবশালী শাহ আলম মণ্ডল পুকুর দুটি দখলে নিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেন। পরে উপজেলা পরিষদ গ্রামবাসীর স্বার্থে ড্রেন পাকা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু শাহ আলম সেই ড্রেনও ভেঙে পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ করে দেন। এর পর থেকে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার কবলে পড়ছে গ্রামবাসী। স্থানীয়ভাবে এ সসম্যা সমাধানে একাধিকবার শাহ আলমের সঙ্গে বসা হয়। কিন্তু তাঁর একগুঁয়েমির কারণে কোনো সমাধান হয়নি।
শনিবার সরেজমিন সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়নের ধারকী আকন্দপাড়া, বড়াইলপাড়া, ফকিরপাড়া, মণ্ডলপাড়া ও প্রধানপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ইট বিছানো সড়ক পানিতে ডুবে আছে। বাদ যায়নি খড়ের পালা, বাড়িঘরের আঙিনা। বড়াইলপাড়া জামে মসজিদে যাওয়ার সড়কটি হাঁটুসমান পানির নিচে। নর্দমার সঙ্গে বর্ষার পানি মিশে নোংরা হয়ে পড়েছে। সেই নোংরা পানি ভেঙে গ্রামের মানুষ যাতায়াত করছে। আঙিনায় পানি ওঠায় অনেকে রান্নাও করতে পারছেন না।
পানিবন্দি আকন্দপাড়া গ্রামের মোজাহার আকন্দ বলেন, বছর তিনেক আগে শাহ আলম মণ্ডল পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেন। সেই থেকে পরিবার নিয়ে সমস্যায় পড়েছি আমরা। প্রতিবাদ করতে গেলেই শাহ আলম মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখান। সমস্যা সমাধানে প্রশাসন উদ্যোগ নিলেও তাঁর একগুঁয়েমির কারণে তা ভেস্তে গেছে।
ধারকী বড়াইলপাড়া গ্রামের মাহমুদুল হোসেন বলেন, গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ শ্রমজীবী ও কৃষক। সড়ককে পানি মাড়িয়ে তাদের কাজে যেতে হয়। কৃষিপণ্য বিক্রি করতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অটোরিকশা ও ভ্যান গ্রামে ঢুকতে পারছে না। এ অবস্থায় আমরা খুব কষ্টে আছি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বলেও কাজ হয় না। উপজেলা নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ভোট নিয়েছেন। এখন পাত্তাই দিচ্ছেন না।
বড়াইলপাড়া গ্রামের তাজেল ইসলাম বলেন, ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। আমরাও নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে পারছি না।
এ বিষয়ে ধারকী গ্রামের শাহ আলম মণ্ডল বলেন, আমার জায়গা দিয়ে পানি যেতে দেবো না। লেখালেখি করে কোনো লাভ হবে না। এ সময় উপজেলা পরিষদের নির্মাণ করা ড্রেনের ভেঙে ফেলা অংশের ছবি তুলতে গেলে তিনি বাধা দেন।
জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করার অধিকার কারও নেই। শিগগির এটি উচ্ছেদ করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদেরও তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।