দুবাইতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ বাংলাদেশি নিহত
ভাগ্য বদলে প্রবাসে গিয়ে পুড়ল ৫ পরিবারের স্বপ্ন

নিহত পাঁচ প্রবাসী। ছবি: সংগৃহীত
দোহার ও নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪ | ২২:৫৪
পরিবারে কারও বাবা অসুস্থ, কারও নেই বিকল্প উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে বেচে দেন শেষ সম্বল, করেন ধার-দেনা। চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা জোগাড় করে পাড়ি জমান সূদুর মধ্যপ্রাচ্যে। আরব আমিরাতে গিয়ে তারা একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কাজ নেন। ভাগ্য বদলের আশায় নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া পাঁচ যুবক গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন কর্মস্থলে। পথে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঝরে গেছে তরতাজা প্রাণগুলো। সাধারণভাবে দগ্ধ দেহগুলো দেখে বোঝার কায়দা নেই- কোনটি কার লাশ।
সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নিহতদের স্বজনরা। এর আগে রোববার দুর্ঘটনার শিকার হন পাঁচ বাংলাদেশি যুবক। নিহতরা হলেন- ঢাকার নবাবগঞ্জের জয়কৃঞ্জপুর ইউনিয়নের বালেঙ্গা গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ রানা (৩০), একই গ্রামের আবদুল হাকিমের ছেলে মো. রাশেদ (৩১), শেখ এরশাদের ছেলে মো. রাজু (২৪), শেখ ইব্রাহীমের ছেলে ওবায়দুল ইসলাম (৩২) ও দোহার উপজেলার দোহার খালপাড় এলাকার মো. মঞ্জুর মৃধার ছেলে মোহাম্মদ হিরা মিয়া (২২)। তারা সবাই আরব আমিরাতের আজমান প্রদেশে বসবাস করতেন।
রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাজের উদ্দেশে আবুধাবি যাওয়ার পথে দুবাইতে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত রানার মা রৌশনারা রুসি ও নয়াবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তৈয়বুর রহমান তরুণ বলেন, নিহতরা সবাই একই সাইটে কাজ করতেন। কাজে যাওয়ার সময় দুবাই সময় রোববার সকাল সাড়ে ৭টায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। গাড়িতে বিস্ফোরণের পর আগুনে তাদের শরীরের অধিকাংশই পুড়ে গেছে। বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় গ্রামের বাড়িতে এ খবর পাঠান আমিরাতে অবস্থানরত নিহতের স্বজনরা।
আমিরাতে পাঁচ বাংলাদেশি নিহতের খবরে শোকের মাতম চলছে তাদের গ্রামের বাড়িতে। স্বপ্ন চূড়মার হওয়ায় হাউমাউ করে কাঁদছেন নিহতদের স্বজনরা। বাবামাসহ পরিবারের সদস্যরা শোকে স্তব্ধ। কান্না থামছেই না স্ত্রী-সন্তানের। শোকাহতদের শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রতিবেশীরা।
দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, দুবাইতে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
বালেঙ্গা গ্রামের নিহত রানার মা রওশন আরা আহাজারি করে বলেন- 'রোববার দুপুরে আমরা দুর্ঘটনার খবর পেয়েছি। আমার বাবাটার চেহারাটা নাকি চিনা যায় না! আমি ঠিকই চিনবো আমার রানাকে।'
দোহার খালপাড় গ্রামের নিহত হিরার মা রোকেয়া বেগম আর্তনাদ করতে করতে বলেন, 'মাত্র সাত মাস আগে ছোট ছেলেটারে সাড়ে চার লাখ টাকা ধার-দেনা করে বিদেশে পাঠিয়েছি। স্বামী ঘরে পড়া, অসুস্থ হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। ছেলে বিদেশে যাওয়ার আগে বাপ-ছেলে দু'জনে মিলে দোহার বাজার এলাকায় চায়ের দোকান করে সংসার চালাতো। সুখের আশায় ছেলেটারে বিদেশে পাঠিয়ে এখন আমার এ কী হলো! আমাদের সংসার এখন কে চালাবে?
দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়ে রোববার দুপুরেই নিহতদের পরিবারকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে আরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
- বিষয় :
- আরব আমিরাত
- প্রবাসীদের মরদেহ
- দোহার
- নবাবগঞ্জ