ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

হল ছাড়তে নারাজ চবির ছাত্রীরা, ছাত্রহলে এখনও নেতাকর্মীরা

হল ছাড়তে নারাজ চবির ছাত্রীরা, ছাত্রহলে এখনও নেতাকর্মীরা

ছবি: ফাইল

চবি প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৪ | ১৫:৪১ | আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৪ | ১৬:১০

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) হলগুলোতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সারাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হল ত্যাগ করতে চাচ্ছেন না নারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার মধ্য হল ত্যাগের কথা থাকলেও এখনও অবস্থান করছেন শতাধিক ছাত্রী। কয়েকদফা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগবিতন্ডা ও তালা মেরে ছাত্রীদের আটকে রাখার অভিযোগও করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে ছাত্র হলগুলোতে এখনও অবস্থান করছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভার পর দুপুর সাড়ে ১২টায় শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রীদের সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিলে তা মেনে নেয়নি। 

এ সময় হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডি শিক্ষার্থীদের জোর করে কক্ষ থেকে বের করার অভিযোগ করেন ছাত্রীরা। বাকবিতণ্ডার সময় ‘আমরা হল ছাড়বো না, হল ভ্যাকেন্ট মানি না’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাস দিয়ে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানান কিছু ছাত্রী। 
তাদের দাবি মেনে নেয় প্রশাসন। রাত ১০টায় প্রশাসনের বাস দেওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে সেটি বাতিল করে দেয় প্রশাসন। সকাল ১০টায় নিজ দায়িত্বে হল ত্যাগের নির্দেশ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রভোস্টরা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের ১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করা কটেজের শিক্ষার্থীদেরও ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

এর আগে প্রীতিলতা হলে নারী শিক্ষার্থীদের হলে তালাবদ্ধ করে রাখা, শামসুন নাহার ও শেখ হাসিনা হলে শিক্ষার্থীদের জোর করে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ জানান শিক্ষার্থীরা।

প্রীতিলতা হলের শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তার বলেন, ‘প্রথমত দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভ্রমণ করা ঝুঁকিপূর্ণ। আবার অনেক নারী শিক্ষার্থী দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পড়তে আসে। তারা কোথায় যাবে এত কম সময়ে। আমাদের শিক্ষকরা জোর করে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। রাতে বাস দিবে বলে তা-ও দেয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি বাসায় এসেছি। তবে শতাধিক ছাত্রীরা এখনও আছেন।’ 

শিক্ষার্থী ফারহানা আরও বলেন, ‘আমাদের প্রভোস্ট লায়লা খালেদা আমাদেরকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। আমরা খাবার খেতে চাইলে উনি বের হতে দেননি। ক্যান্টিনও বন্ধ রাখেন।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ অহিদুল আলম বলেন, ‘আমরা বাস দিবো বলেছিলাম। কিন্তু রাতে নিরাপত্তার কথা ভেবে আর দেইনি। ওদেরকে আরেকটু সময় বাড়িয়ে দিয়েছি। চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো। তবে ছাত্র ও ছাত্রী সব হল ত্যাগ করতে হবে।’ 

শিক্ষার্থীদের জোর করা ও তালাবদ্ধ রাখার অভিযোগের কথা অস্বীকার করে প্রক্টর বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তাদের হল ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত এসেছে। আমার কিছু করার নেই।’ 

দুপুর ২টায় প্রীতিলতা হল থেকে এক ছাত্রী বলেন, ‘আমাদেরকে ৬টার আগে হল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। নিজ দায়িত্বে চলে যেতে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই শাটডাউনে কোথায় কীভাবে যাবো জানি না।’ 

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাতটি হলের সবগুলোর অধিকাংশ কক্ষ ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের নেতাকর্মীদের দখলে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত হলেই অবস্থান করতে দেখা গেছে এসব কক্ষে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের। তবে বুধবার থেকে হল ছাড়তে দেখা গেছে কিছুসংখ্যক ছাত্রকে।  

হল ছাড়বেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে গতকাল সন্ধ্যায় চবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ভিএক্স গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলবো। তবে কেউ যদি ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে চায়, আমরা প্রতিহত করবো।’ 

এর আগে গতকাল দুপুরে নেতাকর্মীরা হল ছাড়বেন বলে সংবাদকর্মীদের জানান।

আরও পড়ুন

×