সড়ক প্রশস্ত করতে তিন হাজার গাছ হত্যার উদ্যোগ
পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা পরিবেশবিদদের

লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ বাজার সড়কের পাশের গাছ কাটছেন শ্রমিকরা
নাসির লিটন, ভোলা
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪ | ১৯:৪১ | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৪ | ২০:১৫
সড়কের দুই পাশে সারি সারি নানা জাতের গাছ। সবুজে মোড়ানো চার দশকের পুরোনো গাছগুলো সড়ক প্রশস্ত করা ও ‘সামাজিক বনায়ন বিধির’ দোহাই দিয়ে কাটা হচ্ছে। বন বিভাগের উদ্যোগে সাড়ে তিন হাজার বৃক্ষ নিধনের এ আয়োজন চলছে ভোলা সদর, লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলায়।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লালমোহনের লর্ড হার্ডিঞ্জের ২ কিলোমিটার সড়কে ২০০টি, তজুমদ্দিনে সাড়ে ৫ কিলোমিটারে ৮৫৬টি ও সদর উপজেলার তিনটি সড়কে ২ হাজার ৫৮৩টি গাছ কাটার জন্য চলতি বছরের মার্চ মাসে টেন্ডার আহ্বান করে বন বিভাগ। ১৫ মে ১ কোটি ৭ লাখ টাকায় গাছ কাটার কার্যাদেশ পান ঠিকাদার। ১৯৯৫-৯৬ সালে গাছগুলো রোপণ করা হয়। সড়ক সম্প্রসারণ ও সামাজিক বনায়নের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার অজুহাতে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ গাছ কাটার এ সিদ্ধান্তে পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।
এ বিষয়ে কথা হয় ভোলা সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহাবুর আলমের সঙ্গে। তিনি একবারে এতগুলো গাছ কেটে ফেলার কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বলেন, উন্নয়ন ও সড়ক প্রশস্তকরণের দোহাই দিয়ে অবাধে গাছ কেটে পরিবেশের ক্ষতি করছে সরকার। গণহারে বৃক্ষ নিধনে জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তিনি আরও বলেন, যতটা সম্ভব গাছ রেখে রাস্তার উন্নয়নের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, লালমোহনের রায়চাঁদ থেকে লর্ডহার্ডিঞ্জ বাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কে দুই শতাধিক গাছ রয়েছে। বিশাল আকৃতির গাছগুলো কাটায় ব্যস্ত শ্রমিকরা। গাছ কেটে অপসারণে বিলম্ব হওয়ায় এক্সক্যাভেটর দিয়ে উপড়ে ফেলছেন ঠিকাদারের নিয়োজিত শ্রমিকরা।
সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাছ লাগানোর পর তারা দেখেশুনে রেখেছেন। এ জন্য তাদের সঙ্গে লিখিত চুক্তিও আছে। সামাজিক বনায়ন বিধিমালা-২০০৪ অনুযায়ী গাছ বিক্রির টাকার মধ্যে ৫৫ ভাগ পাবেন তারা। ১০ ভাগ দিয়ে বনায়ন করা হবে। বাকি টাকা বন বিভাগ, ভূমির মালিক, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) পাবে।
এ বিষয়ে জেলা উন্নয়ন ও স্বার্থরক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ রায় অপু বলেন, সামাজিক বনায়নের বিধিমালার পরিবর্তন দরকার। একবারে একটি সড়কের সব গাছ কেটে ফেলা ঠিক নয়। এতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। নতুন করে গাছ লাগিয়েও এই ক্ষতি পূরণ করা যায় না।
উপকূলীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, মানুষের প্রয়োজনেই এই গাছ কাটা হচ্ছে। রাস্তা প্রশস্ত ও উচ্চতার জন্য এ সিদ্ধান্ত। রাস্তা প্রশস্ত হয়ে গেলে আবার নতুন করে গাছ লাগানো হবে। আর রাস্তার পাশের সামাজিক বনায়নের গাছগুলো রোটেশনওয়াইজ কাটা ও লাগানো হবে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলীল জানান, সরকরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সড়ক প্রশস্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এ কারণে গাছ কাটা হবে। একসঙ্গে অনেক গাছ কাটা পড়বে, স্বাভাবিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি হবে। কিন্তু ভালো খবর হলো ওই সড়কে বনায়ন করে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া হবে।
- বিষয় :
- গাছ কাটার অভিযোগ
- ভোলা