বন্ধ শাবির সব কার্যক্রম, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীরা

ছবি: ফাইল
রাজীব হোসেন, শাবি
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪ | ১৫:৩৯ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৪ | ১৫:৪৬
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকারের পতন হওয়ার পরে সবকিছু স্বাভাবিক হলেও এখনো অচলাবস্থা বিরাজ করছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি)। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, দপ্তর প্রধান এবং ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক পদ থেকে শিক্ষকরা পদত্যাগ করায় যেমন শিক্ষার্থীদের সেশনজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে দপ্তর বন্ধ থাকায় সাবেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মচারীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। এছাড়াও হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত রয়েছেন। এমতাবস্থায় সবার দাবি উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমসহ সবকিছু যেন সচল হয়।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত ২৫ মে থেকে গ্রীষ্মকালীন ও পবিত্র ঈদুল আজহাসহ ২৮ দিন ছুটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়া শিক্ষকরা প্রত্যয় স্কিম বাতিলসহ চার দফা দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাত্মক কর্মবিরতিতে যান। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন নামেন। পরে তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
গত ৫ আগস্ট সরকারের পতন হলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যসহ সব প্রশাসনিক ব্যক্তি এবং দপ্তর প্রধানের পদত্যাগ দাবি করেন। এছাড়াও রেজিস্ট্রার ভবন এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ভবনে আন্দোলনকারীরা তালা ঝুলিয়ে দেন। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে অচল হয়ে পড়ে শাবির সব কার্যক্রম।
দীর্ঘ সময় ধরে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বড় সেশনজটের শঙ্কায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বন্যা, বন্ধ, স্যারদের আন্দোলন এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আমরা একাডেমিক ক্যালেন্ডারে পিছিয়ে গেছি। সরকার পতনের পরে উচিত ছিলো দ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করা। আমরা চাই, ভিসি নিয়োগসহ অন্যান্য নিয়ে দিয়ে দ্রুত সব স্বাভাবিক হোক।’
এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে প্রশাসনিক সব দপ্তর প্রধান পদত্যাগের ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাবেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে শাবির শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ ‘সাস্টিয়ান ভয়েস’-এ ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলতে না পেয়ে চাকরি এবং উচ্চতর শিক্ষার আবেদন এবং বিদেশ গমনের জন্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং কেমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন?
এ বিষয়ে সমকালের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে পরবর্তী ১৭ ঘণ্টায় প্রায় ৪০-এর ওপরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাদের সমস্যার কথা জানান। তেমনই একজন স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী তাজভী আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়াতে আবেদন করার জন্য সার্টিফিকেট উঠানো দরকার। কিন্তু এই অবস্থায় আমি ক্লিয়ারেন্স নিতে পারছি না এবং সার্টিফিকেটও তুলতে পারছি না।’
সাবেক শিক্ষার্থীরা ছাড়াও প্রায় ছয়জন শিক্ষক তাদের সমস্যার কথা সমকালকে জানান। তারা রেজিস্ট্রার না থাকায়, কেউ আবার উপাচার্য না থাকায় মূল সনদ সংগ্রহ করতে পারছেন না। রেজিস্ট্রার না থাকায় প্রয়োজনীয় কাগজ তুলতে না পারায় একাধিকবার প্লেনের টিকিট বুকিং করেও কানাডা যাওয়া আটকে আছে- এমন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক তারিক আজিজ বলেন, ‘স্কলার শিপে কানাডার মাস্টার্স প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু জিও না থাকায় ইতিমধ্যে দুই দফায় বিমানের টিকিট বাতিল করেছি। জিও ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা যায় না।
অন্যদিকে কোম্পানির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নিরাপত্তাকর্মী এবং চুক্তিতে নিয়োগ কর্মচারীদের বেতন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হলেও গত দুই মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় অচলাবস্থায় থাকায় তারা দুই মাসের বেতন পাননি।
এ নিয়ে কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ‘বেতন বিষয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে বেতন প্রক্রিয়া চলমানের মধ্যে সব বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ভিসি স্যার নিয়োগ হলে এটা দ্রুত হবে।’ এছাড়া কর্মীরা জানান, শুধু এবার নয়; প্রতি মাসেই বেতন দিতে দেরি করে এবং তাদের কোনো ছুটি নেই।
প্রশাসন শূন্য ক্যাম্পাসে আবাসিক শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত। গত বৃহস্পতিবার মধ্যে ১০-১২টি মোটরসাইকেলে কিছু বহিরাগত এসে শিক্ষার্থীদের গতকাল দুপুরের মধ্যে হল ছাড়তে বলেন। পরে শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীকে ফোন দিলে তারা এসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
এদিকে ক্যাম্পাসের সার্বিক বিষয় নিয়ে সিন্ডিকেট মেম্বার অধ্যাপক ড. মো. মাস্তাবুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বড় তিনটা পোস্টের কেউ নেই। সরকার দ্রুত অন্তত উপাচার্য নিয়োগ দিলে একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট চালু করে দ্রুত ক্যাম্পাস খোলা প্রয়োজন। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে সবকিছু ধীরে ধীরে শুরু হবে বলে মনে করি। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা মতো আমরা আশা নিয়ে বসে আছি দ্রুত ক্লাসে ফিরবো বলে।’