বাজারে নকল ভোগ্যপণ্য

ফাইল ছবি
শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪ | ২৩:৩৬
চিনিগুঁড়া চালের মোড়ক নকল করে সাধারণ মানের চাল বিক্রির অপরাধে গত ২০ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেডের প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলমগীর এন্টারপ্রাইজকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের একটি টিম। প্রতিষ্ঠানটি ‘বনলতা সুগন্ধি চিনিগুঁড়া চাল’ নামে বিক্রি করছিল সাধারণ মানের চাল। একই দিন প্রতিষ্ঠানটিতে নকল চা বিক্রিরও প্রমাণ মেলে। ‘বনলতা ক্লোন টি’, ‘বনলতা গোল্ড টি’ ও ‘বনলতা প্রিমিয়াম টি’ নামে নিম্নমানের চা বিক্রি করছিল মেসার্স আলমগীর এন্টারপ্রাইজ।
এদিকে গত ২১ আগস্ট মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অপরাধে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনের ‘মেসার্স সাহান মেডিকো’কে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বেশি দামে ওষুধ বিক্রিরও প্রমাণ মেলে।
একই দিন চমেক হাসপাতালের সামনের ওষুধ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান জমজম ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রির প্রমাণ পায় ভোক্তা অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সব শেষ গতকাল শনিবার নগরীর রাস্তা মাথা মোড়ের কামাল বাজারে অভিযান চালিয়ে নকল ডানো ক্রিম ও মেয়াদোত্তীর্ণ ডিজারজেন্ট পাউডার বিক্রির প্রমাণ মেলে আলহা ট্রেডার্সে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও সাধারণ ভোক্তারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ-সংক্রান্ত কয়েকটি সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকে আত্মগোপনে আছেন, আর কিছু পদ শূন্য রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। যে যেভাবে পারছে দাম বাড়াচ্ছে, নকল ভোগ্যপণ্য বাজারে ছাড়ছে তারা।
চট্টগ্রাম মহানগরে বাজার তদারকির দায়িত্ব চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের। কিন্তু জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানকে গত ২০ আগস্ট বদলি করা হয়েছে। এখনও নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আত্মগোপনে আছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ ৫৫ কাউন্সিলরের মধ্যে ৩৯ জন। বিভাগীয় কমিশনারকে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক করা হলেও প্রশাসনিক কার্যক্রম সেভাবে শুরু হয়নি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারকেও বদলি করা হয়েছে। থানাগুলো খোলা হলেও পুরোপুরি কাজ শুরু হয়নি। মূলত এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের রদবদল ও অনেকের কর্মস্থলে অনুপস্থিতির সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা নামি ব্র্যান্ডের মোড়ক তৈরি করে নকল পণ্য বাজারজাত করছে। বিক্রি করছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ।’ এমন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘সরকারের পরিবর্তনের পর সবকিছুই ওলটপালট হয়ে গেছে। এখনও শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকটি পদ খালি। নতুন দায়িত্ব দেওয়া হলেও সবকিছু গুছিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।’
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। দেশের এমন ক্রান্তিকালেও তারা কারসাজি থেকে পিছপা হচ্ছেন না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ ভোক্তা।’
- বিষয় :
- নকল পণ্য