ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

এসপি ভাইয়ের দাপটে ত্রাসের রাজত্ব চেয়ারম্যানের

এসপি ভাইয়ের দাপটে ত্রাসের রাজত্ব চেয়ারম্যানের

কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ ইশতিয়াক পটু

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) সংবাদদাতা 

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২১:০৩

সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন ইউপি চেয়ারম্যান। এলাকার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোসহ নানা কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব চেয়ারম্যানের ওপর অর্পিত হয়। কিন্তু গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ ইশতিয়াক পটুর ক্ষেত্রে সেটা ব্যতিক্রম। একদিকে চেয়ারম্যান, অন্যদিকে দিনাজপুরের সাবেক পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদের ভাই। ক্ষমতার দম্ভে কাউকে পরোয়া করেন না তিনি। 

জানা গেছে, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন পটু। গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। সেই বাহিনী দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। জড়িয়ে পড়েন জমি দখল, চাঁদাবাজি, নিরীহ লোকদের অত্যাচার, মাদক ব্যবসাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে। তাঁর অন্য কোনো পেশা না থাকলেও চড়েন ৩৫ লাখ টাকা দামের গাড়িতে। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকালে পটুর বড় ভাই শাহ ইফতেখার আহমেদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার ছিলেন। যার ক্ষমতা ও অর্থের জোরে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন পটু। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে পটু উপজেলার পাংখারচর এলাকার সুচাইল মৌজায় প্রায় ৪০ বিঘা জমি নিয়ে করেছেন একটি মৎস্য ঘের। যেখানে দখল করা হয়েছে প্রায় ১০ বিঘা সরকারি খাস জমি এবং বিভিন্ন লোকের ব্যক্তিমালিকানা জমি। 

এমনই একজন ভুক্তভোগী জমির মালিক তারাইল গ্রামের জাসু কাজী। তাঁর ভাষ্য, ইউপি চেয়ারম্যান পটু মৎস্যঘের করার কথা বলে তাঁর ৩৮ শতাংশ জমি লিজ নিয়েছেন। এখন টাকা-জমি কোনোটাই দিচ্ছেন না। জমি অন্য কোথাও বিক্রিও করতে দিচ্ছেন না। কেউ কিনতে চাইলে তাকে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। থানায় অভিযোগ করতে গেলেও নেয়নি। তার ভাই এসপি, যে কারণে মামলা নিতে চায় না পুলিশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চেয়ারম্যান প্রভাব খাটিয়ে মৎস্য ঘের থেকে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। এতে ধসে গেছে পাশের সরকারি কালভার্ট, ভাঙছে ফসলি জমি।

এলাকার খেয়াঘাটেও থাবা বসিয়েছেন চেয়ারম্যান পটু। ফুকরা খেয়াঘাট মাঝিদের ইজারা না দিয়ে শ্বশুর জাকির মোল্লাকে দিয়েছেন চেয়ারম্যান। ঘাটটি মাত্র ১৮ হাজার টাকায় জাকিরকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। জাকির ইজারা নিয়ে সাপ্তাহিক চুক্তিতে স্থানীয় মাঝিদের কাছে ইজারা দেন। ঘাট থেকে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা টোল আদায় হয়। চেয়ারম্যান ঘাটটি ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় রেখে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করছেন। 

অভিযোগ রয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যান পটু নিজ ইউনিয়নে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। পুলিশ জেনেও পুলিশের বড় কর্মকর্তার ভাই হওয়ায় তাঁকে ধরতে সাহস পায়নি। উল্টো এলাকার কোনো মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়লে ছাড়িয়ে এনেছেন তিনি।  

২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর উপজেলার ফুকরা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে চেয়ারম্যানের সহযোগী হাদিস শিকদারকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করে র্যা ব-৬। জামিনে বেরিয়ে চেয়ারম্যানের দেহরক্ষী হিসেবে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। এতে আতঙ্কে রয়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ। 

মাসখানেক আগে উপজেলার তারাইল বাজারে ‘স্বামী-স্ত্রী কলহের’ অভিযোগে স্থানীয় ব্যবসায়ী অনুপকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেন চেয়ারম্যান পটু। স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী সংখ্যালঘু। তারা সব সময় চেয়ারম্যান ও তাঁর বাহিনীর ভয়ে আতঙ্কে থাকেন। 

ভূক্তভোগীদের অভিযোগ, বড় ভাই এসপি শাহ ইফতেখার আহমেদের ছত্রছায়ায় শত অপকর্ম করলেও চেয়ারম্যান পটুর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কাশিয়ানী থানায় কোনো অভিযোগ ও মামলা হয়নি। আদালতে মামলা করেও বিচার পায়নি তারা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান শাহ ইশতিয়াক পটু বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য নয়। তিনি জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটনা করছে। মাদক, চাঁদাবাজিসহ কোনো অপকর্মের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। 


 

আরও পড়ুন

×