ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

সোহাগপুর ও শাহজাদপুরে কাপড়ের হাট ইজারা মূল্য পরিশোধ না করেই টোল আদায়

সোহাগপুর ও শাহজাদপুরে কাপড়ের হাট  ইজারা মূল্য পরিশোধ না করেই টোল আদায়

ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জ ও শাহজাদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৩:২৭ | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৪:২৬

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও বেলকুচি উপজেলার দুটি হাটের ইজারা মূল্যের টাকা পরিশোধ না করেই চুক্তিপত্র সম্পাদনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে ইজারাপ্রাপ্তরা হাটের টোল আদায় শুরু করেছেন। সদ্য সাবেক দুই মেয়রের বিরুদ্ধে এ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

সিরাজগঞ্জের তাঁতিদের তাঁতপণ্য (শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা) বেচাকেনায় বেলকুচির সোহাগপুর ও শাহজাদপুর কাপড়ের হাট সারাদেশেই জনপ্রিয়। প্রতি বছরের বাংলা সনের পহেলা বৈশাখ বার্ষিক চুক্তিতে হাট দুটি ইজারা দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। চলতি বছর হাট দুটি ইজারা দেন শাহজাদপুরের সদ্য সাবেক মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনির আক্তার খান তরু লোদী ও বেলকুচির সাবেক পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা। তাদের স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় ইজারাদাররা ইজারার টাকা বকেয়া রেখেছেন।


চলতি ১৪৩১ বাংলা সালে বৈশাখ মাসে সোহাগপুর ও শাহজাদপুর হাট ইজারা দেওয়া হয়। ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় বেলকুচির সোহাগপুর কাপড়ের হাটের ইজারা পেয়েছেন খোদা বক্স। তাঁর বকেয়া ২৯ লাখ টাকা। একইভাবে সরোয়ার হোসেন ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় শাহজাদপুর হাটের ইজারা পেয়েছেন। ভ্যাট ও উৎসে করসহ ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে তাঁর।
এ দুটি হাটের প্রায় দেড় কোটি টাকা এখনও বকেয়া।

অভিযোগ রয়েছে, মনির আক্তার খান তরু লোদী ভাতা কার্ড দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় সরোয়ার হোসেনের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ কাগজপত্র নেন। ভাতা না দিয়ে তাঁর নামে হাট ইজারা নিয়ে নিজেই লোক দিয়ে টোল আদায় করছেন। একইভাবে নিজের লোককে হাট ইজারা দিয়েছেন বেলকুচি মেয়র। তাদের অনিয়মের কারণে ইজারার সাড়ে ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট দুই ইজারাদার বকেয়া পরিশোধ করেননি। অথচ প্রতি সপ্তাহে তাঁতিদের কাছ থেকে টোল তোলা হচ্ছে। দুই পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ হলে ইজারার অর্থ অনাদায়ী ধরা পড়ে।


বেলকুচি পৌরসভার সচিব আমিনুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছুই বলতে পারব না। সবকিছু মেয়রের নির্দেশে হয়েছে। তবে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বেলকুচি পৌরসভার প্রশাসক ইজারাদারকে চাপ দিয়ে ৫ লাখ টাকা আদায় করেছেন। বাকি টাকা পরিশোধে ইজারাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

শাহজাদপুর পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, শাহজাদপুর কাপড়ের হাটের ইজারার অন্তরালে ছিলেন সাবেক পৌর মেয়র তরু লোদী। তাঁর কারণেই সাড়ে পাঁচ মাসে ইজারার সোয়া কোটি টাকার পরিশোধ হয়নি। তাগাদা দিতে গেলে তিনি মারমুখী হতেন। নতুন প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হয়েছে।


বেলকুচি পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইমরান হোসেন বলেন, বিধি অনুযায়ী ইজারার টাকা বকেয়া রাখার বিধান নেই। এরপরও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বকেয়া রাখা হয়েছে। বিষয়টি অবগত হয়ে ইজারাদারকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বেলকুচির পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লিটুস লরেন্স চিরান বলেন, বকেয়া টাকা উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে।


এ বিষয়ে কথা বলতে বেলকুচির সাবেক পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা ও শাহজাদপুরের মেয়র আক্তার খান তরু লোদীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে তারাও পলাতক। দু’জনের মোবাইল ফোনও বন্ধ। তাদের মেসেজ পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও সাড়া মেলেনি।


সোহাগপুর হাটের ইজারাদার খোদা বক্স বলেন, সরকার পতনের পর গত দেড় মাসে ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। সাবেক মেয়র রেজার কাছে আরও ৩০ লাখ টাকা জমা ছিল। উনি টাকা জমা দিলে বকেয়া থাকত না।

শাহজাদপুর কাপড়ের হাটের ইজারাদার সরোয়ার হোসেন বলেন, ভাতার কার্ড করে দিবেন বলে সাবেক মেয়র আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ছবি নিয়েছেন। আমার নাম ব্যবহার করে হাট ইজারা নিয়েছেন। বিষয়টি আমি পরে জেনেছি।


 

আরও পড়ুন

×