ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

কয়রায় তিন দলে তিন ভাই

ক্ষমতার পালাবদলেও নিরাপদ তারা

ক্ষমতার পালাবদলেও নিরাপদ তারা

ফাইল ছবি

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪ | ২০:১৯

বিএনপি অথবা আওয়ামী লীগ– যখন যে দল ক্ষমতায় আসুক না কেন, সেই দলে পরিবারের কেউ না কেউ থাকে। এ কারণে দাপট কখনও কমে না। খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নে পরিবারটি ‘দাপুটে পরিবার’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। 

এ পরিবারের সদস্য হলেন মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও তাঁর ভাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান বেল্টু। তাদের আরেক ভাই মোফাজ্জেল হোসেন জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। দেয়াড়া গ্রামের দোতলা একটি বাড়িতে তারা বসবাস করেন। 

২০১৫ সালে এ বাড়িতে হেলিকপ্টারে চড়ে দাওয়াত খেতে এসেছিলেন ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদের ভাই মনিরুজ্জামান বেল্টু খুলনা জেলা বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।  

মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কেউ টিকে থাকতে পারেননি। এর আগে তাঁর ভাই মনিরুজ্জামান বেল্টু বিএনপির মনোনয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ মনোনীত সব চেয়ারম্যান গা-ঢাকা দিলেও মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ এলাকা ছাড়েননি। তিনি ভাইয়ের অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে দাপটের সঙ্গে পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দুই ভাইয়ের একান্ত অনুগত হয়ে যারা কাজ করেন, দল পরিবর্তন হলেও তাদের পরিবর্তন হয় না। তারা দু’জনের হয়েই কাজ করেন। অনুগত এসব লোকজনের নেতৃত্ব দেন রাসেল নামে তাদের এক ভাগনে, যাকে আগে আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে দেখা গেছে। বর্তমানে বিএনপির সভা-সমাবেশেও একইভাবে দেখা যাচ্ছে। 

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি ও তাঁর ভাগনে রাসেল। মামা-ভাগনের হাতে এলাকার অনেকেই নির্যাতন ও নিগৃহীত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৫ মে কয়রা উত্তরচক কামিল মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ নিয়োগে দায়িত্ব পালন করতে এসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী স্টাডিজ অনুষদের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মারধরের শিকার হন। খবর পেয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা হলে তিন মাস জেলে ছিলেন মাহমুদ। 

২০২২ সালের ২১ মার্চ ইউপি সচিব ইকবাল হোসেনকে একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করেন মাহমুদ। পরে ইউপি সচিবের মামলায়ও জেল খাটতে হয় তাঁকে। এ ছাড়া এক নারীকে বাড়িতে ডেকে ব্যাপক মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে মামা-ভাগনের বিরুদ্ধে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রী এলাকার চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভিন্ন মতাদর্শ থাকবে– এটা স্বাভাবিক। আমার সঙ্গে ভাইয়ের মতাদর্শ এক নাও হতে পারে। 

একই মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান বেল্টু। তিনি বলেন, একই পরিবারের সদস্য হলেও রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হতে পারে। তবে এক ভাইয়ের দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে আরেক ভাই সুবিধা নিচ্ছে– এ অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি তাঁর। 

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মওলা বক্স বলেন, পরিবারটিতে সব দলের নেতা রয়েছেন। এ কারণে ক্ষমতার পালাবদলেও তাদের প্রভাব কমে না। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতারা গা-ঢাকা দিলেও মাহমুদ তাঁর ভাইয়ের প্রভাবে বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। স্বৈরাচারীর দোসর হয়েও এখনও যারা ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের অপসারণ ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। 
 

আরও পড়ুন

×