আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে, অজ্ঞাত আসামি আতঙ্কে কর্মীরা
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার

ফাইল ফটো
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৪ | ০৮:০৮ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪ | ১২:২২
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন। মামলার অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন কর্মীরাও। তবে এসব নেতাকর্মীর মধ্যে কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে সরব রয়েছেন।
জানা যায়, উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর একচ্ছত্র দাপটে গত পনেরো বছর বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠেই দাঁড়াতে পারেননি। বিচ্ছিন্ন কিছু দলীয় কর্মসূচি ছাড়া ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে সরব ছিল বিএনপি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মীকে দেখা যাচ্ছে না। রাজনীতির মাঠ দখলে নিয়েছে বিএনপি। শুরুতেই গা-ঢাকা দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তৃণমূলের অনেকেই এত দিন নিজ নিজ বাড়িতে ছিলেন। এসব কর্মীও এখন মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। যদিও আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীর একাংশ ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে সরব রয়েছেন।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানা ও আদালতে ২২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আড়াইহাজার থানায় তিনটি হত্যা মামলাসহ ১২টি মামলা রয়েছে। একেকটি মামলায় নাম উল্লেখ ছাড়াও ২০০-৩০০ জনকে অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত এসব মামলায় কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পুলিশ তা জানাতে পারেনি।
গ্রেপ্তার আতঙ্ক: হত্যা, নাশকতাসহ একাধিক মামলা দায়েরের পর থেকেই আড়াইহাজারে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীরা আছেন গ্রেপ্তার আতঙ্কে। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু শেখ হাসিনার পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। মোবাইল ফোন ও সামাজিক মাধ্যমে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১০ ইউনিয়নের মধ্যে আট ইউপি চেয়ারম্যান, দুই পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও অধিকাংশ স্থানীয় ইউপি সদস্য আত্মগোপনে রয়েছেন। গুঞ্জন রয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী দেশের বাইরে আত্মগোপনে চলে গেছেন। শুধু মূল দল নয়, আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও লাপাত্তা। যারা এলাকায় অবস্থান করছেন, তারাও ‘অজ্ঞাতপরিচয় আসামি’ আতঙ্কে রয়েছেন। যে কাউকে যে কোনো সময় আটক করে যে কোনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূলের কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার আড়াইহাজার পৌরসভা কৃষক লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন ভূঁইয়া (৩৫) ও হাইজাদী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. ফাউজুল্লাহকে (৪৫) পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পাঁচরুখী এলাকার একটি বিস্ফোরক, লুটপাট ও নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। একই মামলায় গত বুধবার সরকারি সফর আলী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ সিকদারকে (২০) ও মঙ্গলবার হাইজাদী ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল আজিজকে (৪৫) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ৫ অক্টোবর উপজেলার শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদ সভাপতি সাদিক হাসান প্রান্তকে (১৮) গ্রেপ্তার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে বিশনন্দী ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি গ্রামের শফিকুল ইসলাম শফিককে কুপিয়ে হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ৩ অক্টোবর একই হত্যা মামলায় ফতেপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মিয়াকেও সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই হত্যা মামলায় ২ অক্টোবর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন আড়াইহাজার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল রহমান (৪০), একই ওয়ার্ডের তাঁতী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম (৫০), একই ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল আমিন (২৫) ও ওই ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাসুম মিয়া (৪২)।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা ঘরছাড়া। তারা নিজেদের গোপন রাখার চেষ্টা করছেন। তবে পরিবার-পরিজনরা দিনরাত আতঙ্কের মধ্যে থাকছেন। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করে এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, নিজের ঘরে থাকতে পারছেন না। একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে। তিনি কাউকে কোনো দিন একটি খারাপ কথাও বলেননি। এখন তাঁর নামে হত্যা মামলা হচ্ছে। পরিবারের সদস্যরা বেশি ভয়ে আছেন। কখন তাদেরও মামলায় জড়ানো হয়। দিন-রাত টেনশনে থাকতে হচ্ছে।
আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হত্যা মামলাগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও স্থানীয় ও জেলার সাবেক সংসদ সদস্য, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদেরও আসামি করা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম আছে, তারা জেনেবুঝেই আত্মগোপনে গেছেন। সতর্কভাবে থাকছেন।
আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহম্মেদ জানান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে যারা হামলা করছে, তারা ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ছিল। এখন দল পাল্টিয়ে নানা অঘটন ঘটিয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। ১৬ বছর ধরে আড়াইহাজারের প্রত্যন্ত এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিএনপিসহ সাধারণ মানুষের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়েছে।