চবিতে দোকান দখল নিয়ে সংঘর্ষ, স্থানীয়দের সড়ক অবরোধ

স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ছবি: সমকাল
চবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪ | ১৪:১২
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রেলওয়ে স্টেশনে একটি খাবার দোকান দখল নেওয়া নিয়ে স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার ভোর রাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটেছে। পরে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। এ ঘটনায় পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন সংলগ্ন কয়েকটি দোকানের নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় যুবলীগ নেতা হানিফের কাছে ছিল। দোকানগুলো রেলওয়ের জায়গা। এই জায়গায় দোকান পরিচালনা করতে হলে হানিফকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হতো।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মোহাম্মদ হানিফ এলাকা ছাড়লেও নিয়ন্ত্রণ ছাড়েননি। সরকার পতনের পর তার নিয়ন্ত্রিত একটি জায়গায় খাবারের দোকান তৈরি করার উদ্যোগ নেন চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শেখ মাহদি হাসান। গত দুই মাস ধরে দোকানের মেরামত ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করছিলেন তিনি।
আগামী দুইদিনের মধ্যেই ‘আপ্যায়ন’ নামের এই খাবার হোটেল চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে হানিফের অনুসারীরা এতে বাধা দেন। দোকান পরিচালনা করতে হলে চাঁদা দিতে হবে বলেও দাবি করেন। এ নিয়ে গত শুক্রবারও দোকানটিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব নিয়ে বিবাদের মধ্যে আজ ভোর রাতে এই দোকানটিতে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কয়েকটি ফটকা ও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গুলি ছোঁড়ার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে জিরো পয়েন্টে জড়ো হন। পরে সেখানে সকাল ৭টার দিকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন মাইকিং করে জানান যে, স্থানীয়দের ওপর জামায়াত শিবিরের লোকজন হামলা করেছে।
তিনি সবাইকে প্রতিহত করার অনুরোধ জানান। পরে স্থানীয়রাও লাঠিসোঁটা নিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। চার জায়গায় ব্যারিকেড দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ৯টার দিকে পুনরায় বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসের জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবির এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ স্থানীয় যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফ ও তার ভাই ইকবাল হোসেনের অনুসারীরা আগ্নেয়াস্ত্র আর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রাতের আঁধারে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের শনাক্ত করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, সংঘর্ষের ঘটনার পর আহত হয়ে পাঁচজন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। একজন গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে আপ্যায়ন দোকানের অন্যতম পরিচালক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী শেখ মাহদি বলেন, ‘আমরা চারজন মিলে দুই মাস আগে এই দোকান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের ১২ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। স্থানীয় যুবলীগ নেতা হানিফ আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় আমাদের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। শিক্ষার্থীসহ আমাদের দিকেও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়েছে।’
এদিকে হামলার এ ঘটনায় চার শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ‘হানিফ ও তার দলবল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় আশ্রয় দিয়েছে। বিভিন্ন সময় তারা অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হানিফসহ তার দলবলকে গ্রেপ্তার না করা হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।’
এদিকে বক্তব্য জানতে চেয়ে মোহাম্মদ হানিফ ও ইকবাল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ সমকালকে বলেন, ‘একটি দোকান নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে ঝামেলা হয়েছে। স্থানীয় যুবলীগ নেতা হানিফের দলবল হামলা করার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বোমাবাজির ঘটনা ঘটায় ছাত্ররা আতঙ্কিত হয়ে যায়। তারা বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দিয়ে জিরো পয়েন্টে একত্রিত হয়। শিক্ষার্থীদের জমায়েত দেখে হানিফ বাহিনীও স্থানীয়দের ওপর হামলা হচ্ছে বলে মাইকিং করেছে। এ কারণে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করবো ভবিষ্যতে যেন এমন পরিস্থিতি না হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিক্ষার্থীরা লুটপাটের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা নয়। কিন্তু আজকের ঘটনায় খামার থেকে গরু নেওয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট হয়েছে। এর আগেও জামায়াত শিবির এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেছে। আজকের ঘটনায় দেখে তারা নিশ্চিত হয়েছেন, এটি জামায়াত-শিবিরের হামলা।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি
আজ সকাল ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে সংলগ্ন ছয়টি বড় গরু ও দুটি বাছুর বাঁধা রয়েছে। এখানে উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থীরা জানান, এ গরুগুলো তারা মোহাম্মদ হানিফের খামার থেকে এনেছেন। দোকান ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলে তারা গরুগুলো ফেরত দেবেন।
- বিষয় :
- চবি
- চবি শিক্ষার্থী