ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

পদ্মা সেতু চালুর পরও গতি আসেনি মোংলা বন্দরে

পদ্মা সেতু চালুর পরও গতি আসেনি মোংলা বন্দরে

মোংলা বন্দর

মামুন রেজা, খুলনা

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:৫১

পদ্মা সেতু চালুর দুই বছর পরও আশানুরূপ গতি বাড়েনি দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় বিদায়ী অর্থবছরে জাহাজ আসা কিছুটা বেড়েছে। তবে আগের চার অর্থবছরের তুলনায় কম। অথচ পদ্মা সেতু চালুর পর সবার প্রত্যাশা ছিল মোংলা বন্দরে জাহাজ আসা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। এর কারণ হিসেবে বন্দরের পশুর চ্যানেলে নাব্য সংকট, এই বন্দরে জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়া বেশি হওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই বন্দরে জাহাজ এসেছিল ৯১২টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯০৩টি, ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বাধিক ৯৭০টি ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৮৬টি। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮২৭টি এবং সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাহাজ আসে ৮৪৬টি। বন্দরে পণ্য ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং এবং গাড়ি আমদানির পরিমাণও কমেছে। 

এ ছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৩২৯ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৩৮ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৪৮ কোটি টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩০৯ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩০২ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৩১৯ কোটি টাকা।

২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানী থেকে এখন মোংলা বন্দরের দূরত্ব ২০৫ কিলোমিটার। রাজধানী থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার। সেই হিসাবে প্রত্যাশা ছিল, পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলা বন্দর আরও গতিশীল হবে। সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

এ বিষয়ে বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, মোংলায় পশুর চ্যানেলে নাব্য সংকটের কারণে বিদেশি সব বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। এ ছাড়া এখানে জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় বেশি।

বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবং মোংলা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন বলেন, বন্দরের চ্যানেলে সাড়ে ৯ মিটার ও জেটিতে ৮ মিটারের বেশি গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে না। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে এর চেয়ে বেশি গভীরতার জাহাজ আসতে পারে। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের তুলনায় মোংলায় জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়াও বেশি। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুরে এক কনটেইনার পণ্য পাঠানোর জন্য যে ভাড়া পড়ে, মোংলা বন্দরে ভাড়া তার চেয়ে ৬০০ থেকে ৮০০ ডলার বেশি। একইভাবে জাহাজ ভাড়াও বেশি। 

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম বলেন, মোংলা বন্দরে তুলনামূলক অনেক কম কনটেইনার জাহাজ আসে। এখানে মাসে মাত্র তিন থেকে চারটি কনটেইনার জাহাজ আসে, অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন গড়ে তিন-চারটি এমন জাহাজ ভেড়ে। এই ব্যবধান আমদানি-রপ্তানিকারকরা মানতে চান না। কারণ, তাদের একটা টাইম লিমিট থাকে। এই বন্দর দিয়ে পণ্য পাঠাতে গেলে তারা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। 

ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, কনটেইনার রিলেটেড আমদানির সুবিধা এই বন্দরে কম। সবই চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। বন্ডেড ওয়্যারহাউসগুলোও চট্টগ্রামে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীরা বন্ডেড সুবিধা ভালো পান। এ কারণে আমদানিকারকরা অনেকেই মোংলা বন্দর ব্যবহারে এখনও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। মোংলা দিয়ে এখনও আশানুরূপ গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি না হওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, কনটেইনার জাহাজ কম আসায় গার্মেন্ট মালিকরা এখনও চট্টগ্রামমুখী। 

মোংলা বন্দরের অসুবিধা নিয়ে রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, মোংলায় কাস্টমস অফিস থাকলেও বাকি অনেক কিছুই খুলনায়। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের বড় শাখাগুলো সব খুলনায়। এ কারণে ব্যবসায়ীদের খুলনা-মোংলায় দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এটি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এ ছাড়া বিমানবন্দর না থাকায় বিদেশিরা অনেকে মোংলা বন্দরে আসতে চান না। 

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এইচ এম দুলাল বলেন, নাব্য সংকটের কারণে অনেক সময় আউটার বারে বিদেশি জাহাজ রেখে মালপত্র বোঝাই অথবা খালাস করতে হয়। এর জন্য লাইটার জাহাজ ব্যবহার হওয়ায় সময় ও ব্যয় বেশি হয়। এতে বন্দর ব্যবহারকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। 

তবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে আগের তুলনায় জাহাজ আসা কমেছে। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় বিদায়ী অর্থবছরে জাহাজ বেশি এসেছে। এ ছাড়া এখন কিছু কিছু জাহাজ পায়রা বন্দরে যাচ্ছে, যেগুলো আগে মোংলা বন্দরে আসত। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে যাতে আরও বেশি জাহাজ আসে, সেজন্য তারা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।

আরও পড়ুন

×