ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

নানা ‘রোগে’ ধুঁকছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

নানা ‘রোগে’ ধুঁকছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ফাইল ছবি

ইকবাল হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর)

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২২:৫৮

নামেই ৫০ শয্যার হাসপাতাল। নেই অবকাঠামো ও জনবল। রোগী আছে, চিকিৎসক নেই। অনেক ওষুধ ফুরিয়ে গেছে। খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। দু’মাসের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এমন চিত্র ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে মাত্র চারজন চিকিৎসক ও দু’জন সেকমো দিয়ে চলছে এ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। এক্স-রে মেশিন অনেক আগে থেকেই বিকল। নেই কোনো টেকনিশিয়ান। বাড়তি টাকা খরচ করে রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে এক্স-রে করতে হচ্ছে। ছোটখাটো অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে সদর হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিকে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে এমএসআর অর্থ বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা না থাকায় এ প্রতিষ্ঠানে ওষুধের টেন্ডারসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে। ফলে হাসপাতালে ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক রোগী ওষুধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর প্রতিকার চেয়ে গতকাল শনিবার ফরিদপুর সিজিল সার্জন বরাবর আবেদন করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)। 
উপজেলার চরডাঙ্গা থেকে গতকাল শনিবার সকালে বুকের ব্যথা নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে এসেছেন মাবিয়া বেগম। তিনি জানান, চিকিৎসক দেখিয়ে চিকিৎসাপত্র নিয়েছেন। কিন্তু কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারেন কোনো ওষুধ নেই। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়েছে তাঁকে।
দিনমজুর করিম বেপারি এসেছেন হেলেঞ্চা গ্রাম থেকে। চিকিৎসক দেখিয়ে তিনিও সরকারি কোনো ওষুধ পাননি। 
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী ইউনুচ মিয়া বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা না থাকায় তারা দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। 
জানা গেছে, এ হাসপাতালের সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগে ছাত্র আন্দোলন হয়। গত মাসেই তাঁকে বদলি করা হয়।
হাসপাতালে মোট ২২ জন চিকিৎসক থাকার কথা। অথচ আছেন চারজন। এর মধ্যে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সপ্তাহে তিন দিন অফিসে আসেন। বিভিন্ন হাসপতাল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে রয়েছেন পাঁচজন চিকিৎসক। পাঁচজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকার কথা, আছেন দু’জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকটও রয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ থেকে প্রতিদিন সহস্রাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নেন। চিকিৎসক সংকট থাকায় রোগী এলেই জরুরি বিভাগ থেকে তাদের স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গুরুতর রোগী স্থানান্তর নিয়ে বিপাকে পড়ে দরিদ্র পরিবারগুলো। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা না হওয়ায় মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন অনেক রোগী। হাসপাতালে নেই ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন। পুরোনো এক্স-রে মেশিনটি অকার্যকর।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবিদ হাসানের ভাষ্য, জনবল সংকট ও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম চিকিৎসক রয়েছেন। স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা না থাকায় দুই মাস ধরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত। অনেক ওষুধ ফুরিয়ে যাচ্ছে, টেন্ডার দেওয়া যাচ্ছে না। এর প্রতিকার চেয়ে ফরিদপুর সিভিল সার্জন বরাবর আবেদন করেছেন। কর্তৃপক্ষের কাছেও চিকিৎসক সংকট নিরসনে আবেদন করা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন সাজেদা বেগম পলিন বলেন, আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব সংকট বিষয়ে জেনেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। ডিজি অফিস থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলফাডাঙ্গাতে পাঠালে অনেকেই আসতে অসম্মতি জানিয়েছেন। পার্শ্ববর্তী বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন চিকিৎসককে আলফাডাঙ্গায় সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রেষণে থাকা চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিজেদের মতো করে বদলি হয়েছেন।

আরও পড়ুন

×